আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্যের হাতেই ভবিষ্যৎ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৫ সালে। এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র তিনটি মূল স্বার্থকে ভিত্তি করে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক নীতিমালা নির্ধারণ করে। এই নীতিমালাগুলোর মধ্যে রয়েছে; মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা, ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করা এবং কোনো দেশ বা দেশের জোট যেন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ না করতে পারে।

অন্যভাবে বলতে গেলে; যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক সুরক্ষায় কৌশলগত, ঐতিহাসিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেলই একমাত্র কারণ ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি ধরে রাখার প্রশ্নে।

আর এই কারণেই সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে (পরিশোধনাগার) হামলার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এই হামলার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তার ওপরই বোঝা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের ধনিক শ্রেণি মধ্যপ্রাচ্যের তেলকে এখনো নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসেবে কতটা দেখে। কারণ এর ওপরই নির্ভর করবে মধ্যপ্রাচ্যের আগামী।

গত শনিবার সকালে সৌদি আরবের আবকাইক ও খুরাইশ তেলক্ষেত্রে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ড্রোন হামলা চালায়। ওই ঘটনার পর এটা স্পষ্ট হয় যে, ইয়েমেনে সৌদি জোটের পরিচালিত অভিযানের বিপরীতে সৌদিতে হামলা চালিয়ে বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাড়িয়ে দেওয়ার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামরিক সক্ষমতা রয়েছে হুতিদের।

পাশাপাশি হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে সৌদি আরবের শত্রু ইরানের প্রভাব কতটা রয়েছে তাও বোঝা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যখন সরাসরি ওই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে, যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুর তালিকায় ইরান এখনো এক নম্বরে অবস্থান করছে।

অতীতেও অনেকবার দেখা গেছে, বিভিন্ন গ্রুপকে প্রভাবিত করে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে নাজেহাল করেছে। ১৯৪৫ সালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ান যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। তখন রুজভেল্ট সৌদি আরবকে এটা নিশ্চিত করেন যে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে নির্বিঘে তেল বের হতে পারবে।

১৯৯১ সালের ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ শুধু তেলের জন্য লড়াই ছিল না, ছিল তেলের অবাধ প্রবাহ সুরক্ষিত করার লড়াই। তখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এইচ ডব্লিউ বুশ সৌদি আরবে ৫ লাখ ৪০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করে এটা নিশ্চিত করেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রয়েছে।

তেলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত মিত্র তথা জেনারেল, বাদশা ও প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে শান্তি বজায় রেখে চলার নীতি ধরে রেখেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এটা স্পষ্ট করে যে, তারাই মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষক। এবারের জি-৭ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিসরের নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিকে প্রকাশ্যে ‘প্রিয় স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুয়েজ খাল ও মিসর খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী ইরান ও অন্য দেশগুলো এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, কোনো পক্ষই যুদ্ধ চায় না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ইরানের ভূপাতিত করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আবার যুদ্ধের বার্তাও পাওয়া যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ট্রাম্প যদি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ না করে সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে তল্পিতল্পা গোটাতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। আর তখন রক্ষকবিহীন মধ্যপ্রাচ্যকে নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button