আন্তর্জাতিক

স্বাধীনতা আন্দোলন: কাতালোনিয়ার ৯ নেতার কারাদণ্ড

স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার জন্য গণভোট আয়োজন এবং এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের কারণে সেখানকার ৯ নেতাকে কারাদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ‘রাষ্ট্রদ্রোহে’র দায়ে তাদের ৯ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে।

এ মামলায় ১২ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষে ৯ জনের বিরুদ্ধে সোমবার (১৪ অক্টোবর) সর্বনিম্ন নয় থেকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণের’ অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বিধায়, তাদের জরিমানা করা হলেও কারাভোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর যে গণভোট আয়োজন করা হয়, তাতে দণ্ডপ্রাপ্তরা সরাসরি জড়িত ছিলেন বলছে সংবাদমাধ্যম। তারা বলছে, আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে কাতালোনিয়ার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ওরিয়ল জঁকুরেসের সর্বোচ্চ ১৩ বছরের সাজা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে (গণভোট আয়োজনকালে) রাষ্ট্রীয় তহবিল অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত বাকিরা হলেন, কাতালান একটি ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হোর্ডি কুইজার্ট, কাতালান আঞ্চলিক পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার কার্ম ফোর্কাডেল, কাতালান সরকারের সাবেক মুখপাত্র হোর্ডি তুরুল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোয়াকিম ফর্ন, কাতালান পার্লামেন্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোর্ডি সানচেজ, সাবেক বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী রাউল রোমেভা, সাবেক শ্রমমন্ত্রী দোলর্স বাসা, সাবেক অঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রী হোসেপ রাল, সাবেক বিচার বিষয়ক মন্ত্রী কার্লেস মুন্ডো, সাবেক দুই মন্ত্রী মেরিটজেল বোরাস ও সান্তি ভিয়া।

তবে, নিজেদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। গণভোটের আয়োজক কাতালান সরকারের সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমন্তও আদালতের রায়কে ‘নৃশংস’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিচার এড়াতে বিদেশে নির্বাসিত এ নেতা এক টুইট বার্তায় ‘গণতন্ত্র রক্ষায় স্বভূমির তরুণদের প্রতি আহ্বান’ জানান।

স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।

নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাকামী দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।

এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করে বসে কাতালান সরকার। যদিও সেই তৎপরতা ঠেকাতে কঠোর হয় মাদ্রিদ সরকার। শুরু করে ব্যাপক ধরপাকড়। এতে পণ্ড হয়ে যায় কাতালানদের স্বাধীন হওয়ার তৎপরতা। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেলজিয়ামে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন প্রেসিডেন্ট পুজদেমন্ত।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button