বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিস্ময়কর কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুগলের হাতে!

কোয়ান্টাম কম্পিউটার, যার ক্ষমতা কল্পনাকেও হার মানায়। প্রযুক্তি দুনিয়ার বড় বড় প্রতিষ্ঠান টেকসই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছে এবং বাণিজ্যিকভাবে তা বাজারে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। বাস্তবেই তার নাগাল পাওয়ার কথা স্বীকার করল গুগল। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজহারুল ইসলাম অভি

সেপ্টেম্বরে ফাঁস হওয়া গবেষণাপত্রে প্রমাণ মিলেছিল, কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেছে গুগল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তখন এই অবিশ্বাস্য ক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি স্বীকার করেনি। অবশেষে নেচার সাময়িকীতে গুগলের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে। বলা হয়ে থাকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নাগাল যে বা যারা পাবে, তারাই প্রযুক্তি বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ করবে। আর এই কম্পিউটার তৈরি করে ফেলেছে গুগল। নেচার সাময়িকীতে গুগলের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাদের ৫৩-বিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটারটির নাম হচ্ছে সিকেমোর। এর মাধ্যমে একটি বিশেষ গাণিতিক সমস্যার সমাধান মাত্র ২০০ সেকেন্ডে বা ৩ মিনিটের কম সময়ে করতে পেরেছেন। অথচ বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার দিয়ে ওই একই গাণিতিক সমস্যার পূর্ণ সমাধান করতে সময় লাগবে প্রায় ১০ হাজার বছর! বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির অনেক দরজা খুলে যাবে। নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কার, নতুন পদার্থ আবিষ্কার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সব ক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। যদিও গুগলের সিকেমোর কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি ব্যবহারিক প্রয়োগের উপযোগী করে তৈরি করা হয়নি, বরং কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী ধরনের অসাধ্য সাধন করতে পারে তা দেখানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। জেনে নিন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ব্যবহার সম্পর্কে :

কিউবিটের হিসাবে চলবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার

: এখনকার কম্পিউটার চলে বিটের হিসাবে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার চলবে কিউবিটের হিসাবে। বর্তমান কম্পিউটার মূলত বিটের মধ্যেই তথ্য সংরক্ষণ করে। এই বিট হচ্ছে বাইনারি ‘০’ অথবা ‘১’-প্রতিনিধিত্বকারী, যা বৈদ্যুতিন বা আলোক সংকেতের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এই বিটস পদ্ধতিতে আট বিট মিলে তৈরি হয় বাইট, যা সাধারণত একটি সংকেতকে সংরক্ষণে সক্ষম। তা হলে কিউবিট কী জিনিস? এটিও ০-১ বাইনারিকেই ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু আলাদাভাবে নয়। একই সঙ্গে। অনেকটা কোয়ান্টাম তত্ত্বেব বর্ণিত পদার্থের কণা ও তরঙ্গ ধর্মের মতো। কারণ কোয়ান্টাম দুনিয়ায় একই কণা একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় থাকতে পারে এবং তরঙ্গ ও কণাধর্মী আচরণের মধ্যে তার বিচরণও সাবলীল। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল শক্তি, যা ০-১-এর সহাবস্থানের মাধ্যমে একসঙ্গে বহু তথ্য সংরক্ষণে একে সক্ষম করে তোলে। এটি এর শক্তিকে দ্বিগুণ নয়, বহুগুণ করবে।

ডেটা নিরাপত্তা : অনেকেই তথ্যের নিরাপত্তায় এনক্রিপশনকে যথেষ্ট মনে করেন। কিন্তু ভার্চ্যুয়াল যে এনক্রিপশন ভাঙা সম্ভব নয় তা তৈরি করা যাবে। এতে ডেটা নিরাপত্তার পরিস্থিতি বদলে যাবে। এখনকার বেশির ভাগ এনক্রিপশন পদ্ধতি ভেঙে দিতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এর বদলে হ্যাক ঠেকানোর মতো বিকল্প ব্যবস্থা পাওয়া যাবে।

তীব্র গতিসম্পন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার

গুগলের সিকেমোর প্রসেসর সাড়ে তিন মিনিট সময়ে এমন এক হিসাব সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রচলিত সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের করতে ১০ হাজার বছর সময় লাগত। আর্মহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যাথরিন ম্যাকগিওচের মতে, প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে হাজার হাজার গুণ গতিসম্পন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার।

বিগ ডেটার সমাধান : প্রতিদিন আমরা ২ দশমিক ৫ হেক্সাবাইট তথ্য উৎপন্ন করছি, যা ৫০ লাখ ল্যাপটপে থাকা কনটেন্টের সমান। বিশাল এ তথ্যভা-ার বিশ্লেষণ করবে কোন কম্পিউটার? কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পক্ষেই এ পরিমাণ তথ্য প্রসেস করে বিগ ডেটা যুগের চাহিদা মেটানো সম্ভব। ভবিষ্যতে মেশিন বা যন্ত্রের যুগ আসছে। প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যন্ত্র থেকেও তৈরি হবে ডেটা। এসব তথ্যের নিখুঁত বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়েই।

বিদ্যুৎ বাঁচাবে : কোয়ান্টাম কম্পিউটারে অধিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। এটি ১০০ থেকে এক হাজার গুণ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, কারণ কোয়ান্টাম টানেলিং নামের এক পদ্ধতি এতে ব্যবহৃত হয়, যাতে বিদ্যুতের খরচ কমে। এ ছাড়া এ কম্পিউটার নাজুক। যে কোনো ধরনের কম্পন পরমাণুর ওপর প্রভাব ফেলে অসঙ্গতি তৈরি করতে পারে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button