বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

‘ল্যাম্বরগিনি-মেইড ইন বাংলাদেশ’

ইতালির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বরগিনি’র তৈরি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ও জনপ্রিয় স্পোর্টস কার। সেই ল্যাম্বরগিনি-ই কি-না এবার তৈরি হলো বাংলাদেশে!

সত্যিকারের ‘ল্যাম্বরগিনি’ না হলেও সেই আদলে নির্মাতা নিজের তৈরি গাড়িটির নাম রেখেছেন ‘ল্যাম্বরগিনি– মেইড ইন বাংলাদেশ’।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) চলছে তিন দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল ডিভাস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০১৯’।

‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবং ‘নাথিং ইজ ইম্পসিবল’ স্লোগানে দেশে প্রথমবারের মতো চলছে এই প্রদর্শনী। আর নারায়ণগঞ্জের তরুণ ইফতেখার আহমেদ আকাশের তৈরি দেশীয় ‘ল্যাম্বরগিনি’ যেন আয়োজনের শিরোনাম ও স্লোগানকে সার্থক করছে।

ছোটবেলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি দূর না এগোলেও বিভিন্ন গাড়ির প্রতি আকাশের আগ্রহ ও স্বপ্নের গতি ছিল স্পোর্টস কারের মতোই। তাই শৈশব থেকেই অটোমোবাইলস নিয়ে হাতে কলমে কাজ শিখতে শুরু করেন বাবা নবী হোসেনের গ্যারেজেই।

২০১৮ সালে শুরু করে প্রায় ১৪ মাসের নিরলস পরিশ্রমে আকাশ তৈরি করে ফেলেন তার স্বপ্নের গাড়ি ‘ল্যাম্বরগিনি’।

সত্যিকার ‘ল্যাম্বরগিনি’র মতো শক্তিশালী ইঞ্জিন-চাকচিক্য না থাকলেও আকাশের তৈরি ‘ল্যাম্বরগিনি’র বেশ কয়েকটি ফিচারের ‘বাংলাদেশি ভার্সন’ আছে এই গাড়িতে। হেডলাইট, টেইল লাইট, বডি ডিজাইন, সিটের গঠন ‘ল্যাম্বরগিনি’র গাড়ির মতোই। এমনকি আসল ‘ল্যাম্বরগিনি’র মতো এই গাড়ির দরজাগুলোও, যা খুলে উঠে যায় উপরের দিকে।

আকাশ বলেন, ছোটবেলা থেকেই গাড়ির প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ আমার। সেই আকর্ষণ থেকেই এই গাড়িটি নিয়ে কাজ শুরু করি। একটি গাড়ি কীভাবে বানাতে হয় তার সব কৌশল জানতাম না। তাই কাজ শুরুর পর অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যখনই কোথাও আটকে গিয়েছি তখনই সেই বিষয়ে কাজ শিখেছি তারপর আবার কাজ শুরু করেছি।

‘বিভিন্ন সময় বিরতি দিয়ে দিয়ে গাড়িটি বানাতে হয়েছে আমাকে। তবে কোনোবারই আশা ছাড়িনি। সবশেষে গেল রমজানের ঈদের আগেরদিন গাড়ির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।’

আকাশ জানান, পাঁচটি ব্যাটারিতে ২০০ অ্যাম্পিয়ার করে মোট এক হাজার অ্যাম্পিয়ার গাড়িটির শক্তি। চার ঘণ্টায় একবার পূর্ণ চার্জ দিলে এটি চলতে পারে টানা ১০ ঘণ্টা। সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।

গাড়িটি তৈরিতে আকাশের খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। গাড়ি প্রকাশ্যে আসার পর সর্বোচ্চ ৯ লাখ টাকায় বিক্রির সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া প্রায় ১০টি বিদেশি গাড়ি তৈরি প্রতিষ্ঠান আকাশের ‘প্রোজেক্ট’ এ বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি। তবে দেশ-দেশের জনগণের স্বার্থে ফিরিয়ে দিয়েছেন সেসব অফার।

গাড়িটির নির্মাতা আকাশ বলেন, গাড়িটি বিক্রির অফার এসেছিল। নয় লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছিলেন একজন। তবে আমি এটা বিক্রি করতে চাই না। বিক্রি করলে সবাই মনে করবে আমি ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে এটা বানিয়েছি। কিন্তু আমি চাই দেশের জন্য কাজ করতে। আমার উদ্দেশ্য দেশের সব মানুষকে কম দামে ভালো গাড়ি দেওয়ার।

‘এখন পর্যন্ত প্রায় ১০টি বিদেশি কোম্পানি আমার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু আমি সেগুলোতেও রাজি হইনি। কারণ বিদেশি কোম্পানি হলে গাড়ি হবে বিদেশের আর দেশে সেই গাড়ির দাম বেশিই হবে। তাই চাইছি দেশেই এই গাড়ি বানাতে। তবে এখনও দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি। সরকারও কোনো সাহায্য করছে না। উপরন্তু গাড়ি তৈরির লাইসেন্স নেই আমাদের। শুনেছি লাইসেন্স নিতে নাকি অনেক টাকা লাগে যা আমাদের নেই। তাই মূল ধারায় গাড়ি তৈরি করতে পারছি না।’

তবে আকাশের স্বপ্ন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা গাড়ি শুধু দেশেই না বরং পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াবে দুর্বার গতিতে।

প্রসঙ্গত, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবং ‘নাথিং ইজ ইম্পসিবল’ স্লোগানে আয়োজন করা হয়েছে এই ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০১৯ এর।

চলবে বুধবার (১৬ অক্টোবর) পর্যন্ত। এতে সহযোগী পার্টনার হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার’স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপি এবি), বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি এবং বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ)।
এবারের আয়োজনে ৮টি জোনে থাকছে প্রায় দুই শতাধিক স্টল ও প্যাভিলিয়ন। অংশগ্রহণ করছে প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য। রেজিস্ট্রেশন সাপেক্ষে এতে বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন সবাই। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে সেমিনার ও নানা প্রদর্শনী।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button