খুলনা বিভাগসারাদেশ

রাজবাড়ীর লাভলু হত্যা মামলার তদন্তভার পিবিআই’কে দেওয়ার আবেদন পরিবারের

রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ী সদরের বরাট ইউনিয়নের পূর্ব ভবদিয়া গ্রামের আলোচিত লাভলু হত্যা মামলার তদন্তভার পিবিআই’কে দেওয়ার আবেদন করেছে নিহতের পরিবার। এ ব্যাপারে নিহত লাভলু মোল্লার স্ত্রী জাহেদা বেগম রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজবাড়ী সদর থানার এস,আই সনাতন কুমার মন্ডল যথাযথভাবে মামলাটি তদন্ত করছেন না। লাভলু হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামীরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদেরকে গ্রেফতার করছেন না। উপরন্তু তিনি আসামীদের সাথে সখ্য গড়ে তুলেছেন। তার হাবভাবে বাদী পক্ষের মধ্যে ‘মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও সুবিচার’ নিয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় মামলার সঠিক তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলাটি পিবিআইয়ের উপর দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
লাভলু হত্যা মামলার বাদী জাহেদা বেগম এবং অন্যতম ভিকটিম ও নিহতের ভাই বাবলু মোল্লা জানান, ঘটনার সময় এলাকাবাসী মামলার ১০ জন আসামীকে অবরুদ্ধ করে রেখে রাজবাড়ী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে জাহেদা বেগম বাদী হয়ে ওই ১০ জনসহ আরো ৯ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরো ৭-৮ জনকে আসামী করে রাজবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু মামলার পর থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ আর একজন আসামীকেও গ্রেফতার করেনি। বার বার আসামীদের গ্রেফতারের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজবাড়ী সদর থানার ওসিসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়ে কোন কাজ হয়নি।
উপরন্তু গ্রেফতারকৃত ১০ আসামীর মধ্যে ৯ জনই জামিনে বের হয়ে এসে অন্যান্য আসামী ও তাদের দলীয় লোকজন নিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য অব্যাহতভাবে হুমকী ও চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও তারা কোন অভিযোগও নেয় না। পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা তাদের সাথে সহানুভূতিশীল আচরণ করা দূরে থাক, উল্টো দুর্ব্যবহার করে। এ অবস্থায় তারা মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। পিবিআই এর উপর মামলাটির তদন্তভার দেয়া হলে তারা স্বস্তি পাবেন। তারা এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নিহতের পরিবার ও এলাকার কয়েক জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব ভবদিয়া গ্রামের খলিল মন্ডল নামে এক ব্যক্তি ৩ মাস অসুস্থ অবস্থায় ভুগে চলতি বছরের ৩ মার্চ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। খলিল মন্ডলের মৃত্যুর পর এলাকার গ্রাম্য ডাক্তার খালেক ফকির বলে বেড়াতে থাকে খলিল মন্ডল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। একই এলাকার মান্নান মোল্লা এর প্রতিবাদ করে করোনার গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে বললে উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এর জেরে পরদিন ১৯ মার্চ সকালে মান্নান মোল্লা স্থানীয় জনাবের দোকানে গেলে খালেক ফকির তাকে মারধর করে।
এর প্রতিবাদ করায় ২১ মার্চ সকালে মান্নান মোল্লার ভাই বাবলু মোল্লা, ওয়াজদ্দিন মোল্লা ও ভাতিজা সিরু মোল্লা ধান ক্ষেতে কাজ করার জন্য যাওয়ার পথে স্থানীয় সালেকের দোকানের সামনে পৌছালে ধারালো অস্ত্রসস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকা খালেক ফকিরের নেতৃত্বে অন্যান্য আসামীরা তাদেরকে এলোপাতারীভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে।
তাদের চিৎকার শুনে কাছাকাছি স্থানে গম ক্ষেতে কাজ করতে থাকা লাভলু মোল্লা এগিয়ে এলে তাকেও এলোপাতারীভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লাভলু মোল্লাকে মৃত ঘোষণা করেন। জখমী অন্যান্যরা দীর্ঘ দিন রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button