সারাদেশ

কিশোরগঞ্জে এক মাসে সড়কে ঝরল ৩০ প্রাণ

কিশোরগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। গত একমাসের ব্যবধানে এ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ স্কুল শিক্ষার্থীসহ ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক নারী-পুরুষ।

এসব সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে জেলার কটিয়াদী উপজেলায় ৭ জন, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৪ জন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪ জন, কুলিয়ারচর উপজেলায় ৩ জন, তাড়াইল উপজেলায় ২ জন, হোসেনপুর উপজেলায় ২ জন, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ২ জন,বাজিতপুর উপজেলায় ২জন এবং এবং ভৈরব উপজেলায় ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

আর এসব দুর্ঘটনার মধ্যে শুধুমাত্র কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক পথের কটিয়াদী উপজেলার মধ্যপাড়া থেকে উজানচর পর্যন্ত সড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় কিশোরগঞ্জ জজকোর্টের একজন আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহেনশাহ নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনায় আরও প্রাণ হারিয়েছেন কটিয়াদীর আছমিতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস আলী এবং কটিয়াদী উপজেলা যুবদলের সভাপতি হাবিবুর রহমান রাসেলও রয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে নারী ও শিশুসহ ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

এ পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকার এলাকাবাসী মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করছে। সড়ক পথে এ মৃত্যুর মিছিল কিছুতেই না থামায় উদ্বিগ্ন কিশোরগঞ্জবাসী এবার নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে নেমেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। আর এ সব দুর্ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় চালক ও হেলপারের পাশাপাশি মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জেরে জেলা পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নও আন্দোলনে নেমেছে। তারাও বিক্ষোভ -মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি ময়মনসিংহ -কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ১১৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক পথের কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ৬৬ কিলোমিটার সড়কপথ সংস্কার করে ১৮ থেকে ৩০ ফুট প্রশস্ততায় উন্নীত করা হয়। এ ছাড়াও জেলার প্রায় সকল সংযোগ সড়কপথও পাকাকরণ কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এরপরও পিছু ছাড়ছে না দুর্ঘটনা। আর এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, ভৈরব হাইওয়ে পুলিশসহ থানা পুলিশের তথ্যমতে গত এক মাসে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সংযোগ সড়কপথে ছোটবড় ৮০ টির মতো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে, ১৫টি দুর্ঘটনায় নারী-পুরুষের ও শিশুসহ ২৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু আহত হয়।

কিশোরগঞ্জের বিআরটিএ,’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) এর কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক মো. ফয়েজ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এ জেলায় নিটোল টাটা ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টিটিসি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল এণ্ড ট্রেনিং এবং পলাশ ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নামে চারটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। আর এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১০ হাজারের বেশি লোক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৯৫৭ জন ভারি এবং ২৪০ জন মাঝারি যানবাহনের প্রশিক্ষণের পর পরীক্ষা দিয়ে এ কার্যালয় থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন।

এ মোটরযান পরিদর্শকের মতে, রাস্তার অতিরিক্ত বাক এবং পথে পথে যাত্রী নিয়ে টাইম লস করে পরে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে আঞ্চলিক মহাসড়কপথে এবং নাগরিক অসচেতনতার কারণে সংযোগ ও গ্রামীণ পথে অতিরিক্ত দুর্ঘটনা ঘটছে।

কটিয়াদী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ডিএম জহিরুল ইসলাম চালকদের অসচেতনতা এবং প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানোকে দুর্ঘটনার কারণ বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি আরও দাবি করেন, এ পরিস্থিতিতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মোটিভেশন ওয়ার্ক চালানো হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম মনে করেন, মহাসড়কপথে নিষিদ্ধ টমটম, ভটভটি, দেশীয় প্রযুক্তির মালটানার গাড়িসহ সিএনজি ও বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির জন্যই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়ক থেকে এসব যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ রোধ করা সম্ভব হলে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য সচিব লেলিন রায়হান শুভ্র শাহীন  বলেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তবে এসব দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান না করে এবং দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকার সড়ক পথ নির্বিঘ্ন করার কাজ না করে সম্প্রতি দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় চালক-সেবকের পাশাপাশি মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি অবিবেচনাপ্রসূত। আর কারণে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন।

তবে, সাধারণ এলাকাবাসীর দাবি, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ড্রাইভারদের ঘুমিয়ে পড়া এবং হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানোকে দুর্ঘটনার কারণ বলে দাবি করেন।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এলাকাবাসীর পক্ষে আন্দোলনকারীদের একজন রাজিব কুমার সরকার পলাশ যুগান্তরকে বলেন, এসব দুর্ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে যে, এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের পাশাপাশি দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী সাতকাহনকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধ বর্তমানে কিশোরগঞ্জবাসীর বার্নিং ইস্যু কথাটি স্বীকার করে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এবং অভিযুক্ত চালক ও মালিকদের পক্ষে নানা দাবি সম্বলিত পৃথক স্মারকলিপি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আলোচনাক্রমে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণেরও আশ্বাস প্রদান করেছেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button