রংপুর বিভাগসারাদেশ

কুড়িগ্রামে কার্তিকে কাজের অভাব, ভরসা শুধুই ব্রহ্মপুত্র

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: চলতি বছর পরপর চার দফা বন্যা আর অব্যাহত নদী ভাঙনে নাকাল কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। বন্যায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি ও কার্তিকে কাজের অভাবে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের হাজারো মানুষ। আর্শ্বিন-কার্তিকে চরাঞ্চলে বিকল্প কাজ না থাকায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইলিশ ধরতে নৌকা আর জাল নিয়ে  ব্রহ্মপুত্রে নামেন মৌসুমি জেলেরা। তারা বলছেন, বছরের এ সময়টা ব্রহ্মপুত্র তাদের রুজির উৎস। বছরের এ সময়টা উপার্জনের বিকল্প পথ না থাকায় মাছ ধরা ছাড়া তাদের অন্য কোনও পথ থাকে না।
জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে ব্রহ্মপুত্র নদে মোট ২১৭টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় ৫ জেলেকে দুই হাজার ২০০ টাকা জরিমানা ছাড়াও জাল জব্দ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫০ মিটার। আর ইলিশ জব্দ করা হয়েছে ৩৫ কেজি।
২০১৭ সালে ইলিশ জোনভুক্ত হওয়া কুড়িগ্রামে ইলিশের মূল বিচরণ স্থল ব্রহ্মপুত্র নদ। এর বিস্তীর্ণ জলরাশিতে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে লাখো মানুষ। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন নদে মাছ শিকার বন্ধ থাকলেও অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে জাল ফেলেছেন। প্রশাসনের তাড়া খেয়ে খুইয়েছেন নিজেদের জাল। কারণ মাছ না ধরলে তাদের চলার কোনও উপায় নেই।
নিষেধাজ্ঞার সময়ে উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের আলগা এলাকার ব্রহ্মপুত্রে মাছ শিকার করতে আসা জেলে সোহরাব আলী বলেন, ‘এখন তো কাজের অভাব, নদীতে মাছ না ধরলে আমাদের চলার কোনও গতি নাই। কাতি (কার্তিক) মাস গেইলে আমরা বাইরা (বাইরে অন্য এলাকায়) কাজে যাইতে পারবো।’
একই ইউনিয়নের চেরাগের চর এলাকার জেলে ফুল চাঁদ বলেন, ‘তিন ভাগি (অংশীদার) মিলে মাছ ধরি। যা পাই ভাগ কইরা লই। কিছু বাচ্চাগো নিয়া খাই, বেশি পাইলে বেঁচি। দ্যাশে (এলাকায়) কাজ কর্ম নাই বইলাই মাছ মাইরা খাই। কাজকর্ম থাকলে তো মাছ মারতাম না।’
তবে পেশাদার জেলেরা বলছেন, অপর্যাপ্ত প্রণোদনা এবং বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় তারা নদীতে নামতে বাধ্য হয়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে তিন বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদেই নৌকা আর জাল নিয়ে নদে বিচরণ করেন তারা।
চিলমারীর রমনা ইউনিয়নের জেলে আব্দুল মজিদ বলেন, ‘সরকার আমাদেক যে ২০ কেজি চাউল দেয় সেটা দিয়া তো তিন-চার দিনের বেশি চলা যায় না। আমাদেরকে যদি এই সময় (নিষেধাজ্ঞার সময়) অন্য কর্মের ব্যবস্থা করি দেয় তাহলে আমরা নদীতে যাবো না। কিন্তু রোজগার না করলে খামো কী? সেই জন্যে নদীত যাই।’
আন্দোলন কর্মী নাহিদ হাসান বলেন, ‘ইলিশের প্রাচুর্যতা বাড়ার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা প্রশংসার দাবিদার। তবে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন সময়ে জেলেদের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ প্রণোদনা এবং ওই সময়টাতে জেলেদের জীবন মান উন্নয়নে ভাতাসহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে জেলেরা একদিকে প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থেকে নদীতে নামা থেকে বিরত থাকবেন। আবার ভাতা দিয়ে তারা তাদের দৈনিক বাজার খরচটা করতে পারবেন। এতে করে নদী জাল মুক্ত থাকবে।’
জেলেদের জন্য প্রণোদনার অপ্রতুলতার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) কালিপদ রায় বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় প্রণোদনা পাওয়া জেলের সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছর আমরা সাড়ে সাত হাজার জেলেকে প্রণোদনা দিয়েছি। যদিও অনেকের পরিবারের জন্য ২২ দিনে ২০ কেজি চাল পর্যাপ্ত নয়। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। সরকার বিবেচনা করলে আগামীতে প্রণোদনা পরিমাণ বাড়তে পারে।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button