রংপুর বিভাগসারাদেশ

কুড়িগ্রামে বন্যায় চরম দুর্ভোগে বানভাসী মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে তিন দিনে তিন শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার চরাঞ্চলসহ নি¤œাঞ্চলের ঘরবাড়ী থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের। গত এক সপ্তাহের অব্যাহত বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া বানভাসী অনেক পরিবারের ঘরে খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন তারা। সরকারীভাবে ত্রান তৎপরতা শুরু হলেও অপ্রতুলতার কারনে অনেকের ভাগ্যে জুটছে না তা।
জেলার ৯ উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৬শ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলসহ সবজি ক্ষেত।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার পারবতীপুর চরের মজির আলী জানান, গত ১ সপ্তাহ ধরে পারবতীপুর চরের সব ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়িতে শুকনো জায়গা না থাকায় চুলা জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারনে শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে তাদের।
একই চরের সবিরন, রব্বানী জানান, প্রতি বছর বন্যার আগে কিছু খাবার ঘরে মজুদ রাখতেন তারা। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারনে দীর্ঘ সময় কর্মহীন হয়ে পড়ে আছেন তারা। তাই ঘরের সামান্য খাবার শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ধারদেনা করে একবেলা খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন পার করছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে গো খাদ্যের সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে।
পার্শ্ববতী চর গ্রাম গারুহারা বলদিয়াপাড়ার সুরুজ্জামান ও শাহাজাহান জানান, ঘর-বাড়িতে পানি উঠলেও নৌকা না থাকায় ঘরের চৌকি উঁচু করে সেখানেই বসবাস করছেন তারা। খাদ্য সংকটে ভুগলেও এখন পর্যন্ত সরকারী বা বেসরকারী কোন সহায়তা পৌছায়নি তাদের কাছে।
এ ব্যাপারে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাইনুদ্দিন ভোলা জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১৫ হাজার পানিবন্দি মানুষের জন্য বুধবার ৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
এই যাত্রাপুর ইউনিয়নের মতো অবস্থা ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের অববাহিকার উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ি ও রাজারহাট উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলের।
অন্যদিকে বন্যার পানিতে ডুবে বুধবার এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় গত তিন তিন শিশুসহ মোট চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্র জানায়, বুধবার সকালে উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জানজায়গীর গ্রামে ১৪ মাস বয়সের মুক্তাসিন নামে এক শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়া গত তিন দিনে পানিতে ডুবে চিলমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী গ্রামের শান্ত মিয়া (৫) ও নয়ারহাট ইউনিয়নের জামাল ব্যাপারী(৫৫) এবং নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেন(৫) নামে এক শিশুর মারা গেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৬৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, জেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন করে আরো ১শ মেট্রিক টন চাল ও ১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button