খুলনা বিভাগসারাদেশ

খুলনায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন চাষ

আঁটি ও বিচিহীন বিচিত্র কালারের দৃষ্টিনন্দন ফল। দেখতে আকর্ষণীয় ও সুমিষ্ট রসালো স্বাদযুক্ত। ফলটি আবরণ সহকারেই খাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে সৃমদ্ধ এই ফলটি হচ্ছে ত্বীন। পবিত্র কোরআনের ত্বীন সুরায় বর্ণিত মিষ্টি ও সুস্বাদু এই ফল বাংলাদেশের মাটি-আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ত্বীন ফল বছরের ৩৬৫ দিনই উচ্চ ফলন দিয়ে থাকে। রোগবালাই নেই বললেই চলে। ৬ মাসের ত্বীন চারা লাগানোর ২-৩ মাসের মধ্যেই ফল দেওয়া শুরু করে। একটি ত্বীনগাছ গুণগত ফল দিয়ে থাকে অন্তত ২৫ বছর পর্যন্ত।

খুলনায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন চাষ শুরু করা করেছে। ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক নিউটন মণ্ডল তার বাড়ির ছাদে ড্রাম পদ্ধতিতে একশ গাছ লাগিয়েছেন।

শুধু ছাদেই নয়, মাঠেও লাগিয়েছে এই ফলের গাছ। শখের বসে একটি গাছ কিনে আজ তার ২০০টির মতো গাছ রয়েছে। যার প্রত্যেকটিতে ফল ধরেছে।

ফলটি ভোজনরসিক মানুষের জন্য জনপ্রিয়
মিশরীয় জাতের এই ফলটির গাছ থেকে কলম করে চারা তৈরি করছে এই নিউটন। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই ফলটি ভোজনরসিক মানুষের জন্য জনপ্রিয়। এই ফলচাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। একইসঙ্গে এর চারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতে চান তিনি। সে জন্য গাছ কাটিং করে প্রস্তুত করছেন কলমের চারা।

সেই চারা চাষিদের মধ্যে বিক্রি করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সহজেই চাষযোগ্য এই গাছের সুস্বাদু ফলের দামও ভালো। তাই তো শুধু নিউটনই নয়, কৃষক নবদ্বীপসহ খুলনার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ত্বীন ফল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ডুমুরিয়ার ঘোনা মাদারডাঙ্গা এলাকার কৃষক নিউটন মণ্ডল বলেন, শখের বসে গত বছর একটি ত্বীনগাছ কিনে নিয়ে আসি। সেই গাছ থেকে ৫ কেজির মতো ফল পেয়েছি। ফলটি আমি খেয়েছি। খুব মিষ্টি। এক কেজি ১ হাজার টাকায় বিক্রিও করেছি।

তিনি আরও বলেন, কোরআনে বর্ণিত ফলটিতে শুনেছি ৭০ প্রকার ঔষধি গুণ রয়েছে। তার পর চিন্তা করলাম একটু গা লাগিয়ে চাষ করে দেখি। এরপর ভারতের কেরালা থেকে আরও ২০০টি গাছ আনিয়েছি। নিজবাড়ির ছাদে ড্রামে একশটি গাছ লাগিয়েছি। ছাদে প্রতি ড্রামে একটি গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করে ব্যয় পড়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা।

কৃষক নিউটন মণ্ডল বলেন, এছাড়া দেড়শ আছে মাটিতে। যার প্রত্যেকটিতে ফল এসেছে। প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ৫ কেজি করে ফল আশা করছি। ২ মাস পর থেকে বাজারে ফল বিক্রি করতে পারব। এই গাছটির একটা গুণ আছে, একবার লাগালে সারাবছর ফল দেয়।

১ কেজি ফলের দাম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা
তিনি বলেন, এই ফলের পাইকারি বাজার মূল্য রয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ২০০ গাছ থেকে এবার ১ হাজার কেজি ফল উৎপাদনের আশা করছি। এছাড়া এই গাছ থেকে কলম করছি। চারা তৈরি করে সারাদেশে ত্বীন ছড়িয়ে দিতে চাই।

কৃষি ক্ষেত্রে অবদান রাখা এই কৃষক বলেন, আমার দেখাদেখি অনেকেই ত্বীন চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এখানকার নবদ্বীপসহ অনেকেই ত্বীন চাষে ঝুঁকছেন। ছাদে ত্বীন চাষে সফল হওয়া সম্ভব। যাদের ছাদ রয়েছে তারা ফেলে না রেখে ড্রাম পদ্ধতিতে ত্বীন, আপেল, রামভূটান, জয়তুন গাছ লাগালে খুবই লাভবান হবে।

ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক নবদ্বীপ বলেন, কোরআনে বর্ণিত স্বাদেগুণে ভরা ফলটি চাষে ভবিষ্যৎ খুব ভালো হবে। এই গাছের চারা ও ফল অনলাইন অথবা অফলাইনে বিক্রি করব।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, কোরআনে ত্বীন ফলকে শপথ করে কথা বলা হয়েছে। এটি একটি পবিত্র ফল। দেশে ত্বীন আগে লাগানো হতো না। গাছটি লাগানোর ২ থেকে তিন মাসে ফল চলে আসে। সহজেই চাষ করা যায়। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটি ত্বীন চাষে অত্যন্ত উপযোগী।

ত্বীনগাছ গুণগত ফল দিয়ে থাকে অন্তত ২৫ বছর
তিনি বলেন, ফলটি সাধারণত সুপার মার্কেটগুলোতে পাওয়া যায়। ১ কেজি ফলের দাম প্রায় ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। গাছটি কাটিং করে চারা প্রস্তুত করা সহজ। বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে এই গাছটি ভালো হয়। আর ছাদে লাগালে একদিকে যেমন পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি এটি প্রকৃতিকে ভালো রাখবে, পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।

এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ত্বীন বিক্ষিপ্তভাবে কয়কটি বাড়িতে চাষ হচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে নিউটনের এখানেই প্রথম। এটি দেশের একটি সম্ভাবনাময় ফসল। নতুন এই ফসল সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, প্রথমে বটিয়াঘাটার মাদ্রাসায় ত্বীনের চারা লাগানো হয়। সেখানে ভালো ফলন পাওয়াতে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় এটার বিস্তার শুরু হয়।

তিনি আরও বলেন, ত্বীনের চারা এখানে অপ্রতুল। যদি নার্সারির মাধ্যমে এই চারা আরও মাল্টিপ্লাই করতে পারি তাহলে সবার ভেতরে জনপ্রিয়তা দেখা দেবে। এটি লবণসহনশীল একটি গাছ। তাই লবণাক্ত এলাকায় এটির সম্ভাবনা খুব বেশি আছে। নিউটন একটি নার্সারি করার চেষ্টা করছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button