সারাদেশ

ঘরে ফেরাদের নিয়ে আতঙ্কে কুড়িগ্রামবাসী!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:  কর্মস্থল থেকে এখনও দলে দলে মানুষ বাড়ি ফিরে আসছেন। গত ১১ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৮ দিনে ফিরে এসেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৮৭৭ জনের তালিকা তৈরি করতে পেরেছেন জেলা পুলিশ। গণপরিবহণ বন্ধ এবং কড়া নজরদারী থাকা সত্বেও ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাসে, ট্রাকে, পিকআপ ভ্যান, নৌকাসহ নানান যানবাহনে চড়ে ফিরে আসছেন তারা।

এমনকি রংপুরে নেমে ৫০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এসেছেন কেউ কেউ। এদের মধ্যে অনেকে করোনাভাইরাস সংক্রমিত এলাকাগুলো থেকে আসায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কেননা জেলায় এ পর্যন্ত যে দু’জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে তাদের একজন সাভার থেকে ফেরা ১৭ বছর বয়সী কিশোর এবং একজন নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে আসা ৩০ বছর বয়সী যুবক।

কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সূত্র জানিয়েছেন, বাড়ি ফিরে আসা ৫ হাজার ১ জনের তালিকা শনিবার (১৮ এপ্রিল) জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের কাছে পাঠিয়েছেন তারা। এই তালিকায় সদর থানার ৮৫৫ জন, উলিপুরের ২৭১ জন, চিলমারীর ৬৫ জন, রৌমারীর ৯৭৮ জন, রাজিবপুরের ৪০ জন, নাগেশ্বরীর ২৪০ জন, ভূরুঙ্গামারীর ৯২২ জন, রাজারহাটের ৭৫৪ জন, ফুলবাড়ীর ২৫৮ জন, কচাকাঁটার ৫৬৯ জন ও ঢুষমারা থানার ৪৯ জনের নাম রয়েছে। এর আগে গত ১১ এপ্রিল ১৪৬ জনের এবং ১৩ এপ্রিল ৭৩০ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত ১৩ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে জেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী এসেছেন ৪২৫ জন।

সূত্র আরও জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ গাড়ির ব্যবস্থা করে অনেককে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এরমধ্যে গত ১২ এপ্রিল দুপুরে ৭টি বাসে দু’শতাধিক শ্রমিক ফরিদপুর থেকে এখানে এসেছেন। তারা ফরিদপুর জেলার আলতু জুট মিলে কাজ করেন। মিল বন্ধ হওয়ায় তাদের নিজস্ব পরিবহণে ফেরত পাঠায় মিল কর্তৃপক্ষ।

গত ১৪ এপ্রিল ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ট্রাকে চড়ে আসেন ২ শিশু ও ৩ নারীসহ ৬২ জন। নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ও কচাকাঁটা ইউনিয়নের অধিবাসী এই ৬২ জনকে কচাকাঁটা থানা এলাকাধীন কচাকাঁটা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। এরা সবাই ইটভাটায় কাজ করতে গত বছরের নভেম্বর মাসের দিকে সেখানে গিয়েছিলেন।

এ অবস্থায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের কাঁঠালবাড়ী, কুড়িগ্রাম-তিস্তা সড়কের চায়না বাজার, কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের চিলমারী, চিলমারীর রমনা নৌ-ঘাট, কুড়িগ্রামের ধরলা সেতু ও ফুলবাড়ীর শেখ হাসিনা ধরলা সেতুসহ জেলার প্রবেশ পথ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ১৯টি চেক পোষ্ট বসানো হয়েছে। এসব চেকপোস্টে জেলার বাইরে থেকে আসা লোকদের তথ্যাদি নিয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, এখন শুধুমাত্র থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এজন্য বিভিন্ন লক্ষণ দেখে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে যারা বাইরে থেকে এসেছেন তাদের অনেকে তথ্য গোপন করছেন। কোথা থেকে এসেছেন তা সঠিকভাবে বলছেন না। তাদের দেওয়া তথ্যের সাথে এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য মিলছে না। এতে সমস্যা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, জেলার রৌমারী ও সোনাহাট স্থলবন্দরে ১টি করে দু’টি থার্মাল স্ক্যানার রয়েছে। এরমধ্যে সোনাহাট স্থলবন্দরের থার্মাাল স্ক্যানারটি নষ্ট হয়ে আছে।

তিনি আরও জানান, জেলার বাইরে থেকে লোকজন আসা অব্যাহত থাকায় হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। এজন্য শনিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল থেকে রোববার (১৯ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা মানুষের সংখ্যা ৪১ থেকে বেড়ে ৯২ জনে দাঁড়িয়েছে। এনিয়ে রোববার সকাল পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪৮৩ জন। আর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৩৫৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার বিকেল পর্যন্ত সময়ে ২৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসেছে ১৪৩ জনের। তারমধ্যে দু’জনের ফলাফল পজিটিভ এসেছে। তাদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা হাসপাতালের করোনাভাইরাস আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান (বিপিএম) বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতামূলক সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। সেইসাথে জেলা পুলিশের নিজস্ব উদ্যোগে কর্মহীন মানুষদের খাদ্য সামগ্রী সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৫০টি পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button