রংপুর বিভাগসারাদেশ

ঠাঁই না পাওয়া মা-বাবার ভরসা নীলফামারীর নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রম

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: কখনও কষ্টের কথা মনে করে ডুকরে কাঁদেন, কখনও ভাবেন বেশ ভালো আছেন তাঁরা। এমন অনুভূতি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে সন্তানদের কাছে ঠাঁই না পাওয়া মা-বাবার। অসহায় মা-বাবার পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এ বৃদ্ধাশ্রম। এটি এখন জেলার আশ্রয়হীন বৃদ্ধদের কাছে একমাত্র ভরসা ।
সরে জমিনে জানা যায়, উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ভিটা সরকার পাড়ার এলাকার আলহাজ সামসুল হকের ছেলে কিটনাশক ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান সাজু ছাত্রাবস্থায় বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলার স্বপ্ন বুনেন। কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স পাস করে নিজ উপার্জিত টাকা দিয়ে ২০১৮ সালে নিজের জায়গায় পাঁচটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করেন। পরবর্তিতে ওই উপজেলার একই ইউনিয়নের চাকুরিজীবি মাসুদ আলম ও পুটিমারি ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান তার সহযোদ্ধা হন। শুরুতে একজন বৃদ্ধ বাবাকে দিয়ে শুরু হলেও এখন আশ্রয়ে রয়েছেন ১৬ জন অবহেলিত ও নির্যাতিত বৃদ্ধ বাবা-মা।
এ নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত একজন নীলফামারী সদরের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা মতলুবার রহমান মানিক (৭০)। তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (ডুয়েট) অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৮০ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন চাকরি থেকে। ছোট ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। একটি কোম্পানিতে চাকরি করে নতুন জীবন শুরু করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তার সাথে স্ত্রী ও ছেলে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। তিনি জানান, তার ছেলে প্রলোভন দেখিয়ে তাকে নীলফামারীতে পাঠান জনশক্তির ব্যবসার উদ্দেশ্যে । দেশে এলে তার সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় । চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আসার পর স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে যান। ওই অবস্থায় কাছের আত্মীয়-স্বজনও তার পাশে না দাঁড়িয়ে মুখ ফিরিয়ে নেন। এর মধ্যে শুরু হয় মহামারি করোনা। এরপর আশ্রয় মেলে এ বৃদ্ধাশ্রমে। তার মতোই পঞ্চাশোর্ধ্ব অসহায় পিতা মাতা বসবাস করছেন এই আশ্রমে।
উদ্যোক্তা সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, সমাজের অসহায় মানুষগুলো পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য কিছু করার আনন্দটাই অন্যরকম। শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও মাসুদ ও আনিসুরকে সহযোদ্ধা হিসেবে কাছে পেয়ে এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে। এ বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা করতে তার শিক্ষিকা স্ত্রীও তাকে আর্থিক সহায়তা প্রদাান করেন। তিনি আরও জানান, আশ্রমে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টাকা তাদের খাওয়া ও ওষুধ বাবদ খরচ হয়।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, এরকম একটি উদ্যোগ সত্যিই মহৎ। এবছর আমার ছেলের জন্মদিন ওই বৃদ্ধাশ্রমে অসহায় বাবা-মাকে সাথে নিয়ে উদ্যাপন করেছি। সাধ্যমত বৃদ্ধশ্রমে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button