বরিশাল বিভাগসারাদেশ

নীলফামারীতে সংসার চালাতে শিক্ষক ওয়ালিউল এখন দিনমজুর!

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: নীলফামারীর সদর উপজেলার পলাশবাড়ি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ওয়ালিউল। বাড়ি একই উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়ন বামনডাঙ্গা গ্রামে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের দেয়া বেতন, পাশাপাশি দু’একটা টিউশনি করে কোনো রকম চলে যেত পরিবারের এক মেয়ে, এক ছেলে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে।
কিন্তু করোনা যেন তার পরিবারের মাঝে কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে সর্বগ্রাসী করোনা তাকে বানিয়েছে শ্রমিক। এমন পরিস্থিতিতে রাতে নাইট গার্ড আর দিনে কখনও কারো ক্ষেত-খামারে আবার কখনও রাজমিস্ত্রীর কাজ করছেন তিনি। এক কথায় যখন যে কাজ পাচ্ছেন তাই করছেন। তবে কাজ পেতেও কিছু বিপত্তি পোহাতে হচ্ছে। পেশা শিক্ষকতা থাকার কারণে অনেকে চক্ষুলজ্জায় তাঁকে কাজে নিতে দ্বিধাবোধ করেন। এ কারণে অনেক সময় তাঁর কাজও জোটে না। এখন এভাবেই মানবেতর দিন কাটছে মানুষ গড়ার ওই কারিগরের।
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়, তিনি তখন স্থানীয় একটি বিল্ডিং নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। প্রথমে তিনি ইতস্তত করছিলেন এ বিষয়ে কথা বলতে। ইতস্তত ভেঙ্গে তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করব? ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বেঁচে তো থাকতে হবে। করোনার আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেতন থেকে সামান্য কিছু টাকা পেতাম। পাশাপাশি কয়েকটি টিউশনি করে কোনো রকমে পরিবার নিয়ে টিকে ছিলাম। করোনার পর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। টিউশনিও বন্ধ। এ কারণে আমাদের জীবন অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে একটি সিরামিক্স কোম্পানীতে নাইট গার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করি আর দিনে দিনমজুরী করি।
তিনি আরও বলেন, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ায় সরকারি কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছি না। এ অবস্থায় আমাদের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে মানুষ যখন যে কাজে ডাকে সেই কাজ করি। কখনো রাজমিস্ত্রি যোগানদার, কখনো অন্যের ক্ষেতে দিন মজুরী করে সংসারের ঘানি টানছি।
তাঁর প্রতিবেশী আরশাদ আলী বলেন, শিক্ষক ওয়ালিউল বাধ্য হয়েই দিনমজুরির কাজ করছেন। তবে তিনি শিক্ষক হওয়ার কারণে অনেকেই তাঁকে কাজে নিতে লজ্জাবোধ করেন। আমি নিজেই গত সপ্তাহে অন্য লোক দিয়ে বাড়ির নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছি। কিন্তু শিক্ষক হওয়ার কারণে তাঁকে শ্রমিক হিসেবে কাজে নেওয়ার কথা বলতে পারিনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button