রংপুর বিভাগসারাদেশ

সৈয়দপুরে কোচ স্ট্যান্ড না থাকায় দুরপাল্লার যাত্রীদের দূর্ভোগ

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে ১১টা। ষাটোর্ধ্ব বছরের এক বৃদ্ধ এবং ২০ থেকে ২৫ বছরের এক নারী রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি এক হাতে লাগেজ আরেক হাতে বৃদ্ধকে ধরে রেখেছেন। আরো দুটো লাগেজ রাস্তায় ফেলে রেখেছে। রাস্তার আরেক পাশে আরো বেশ কিছু বিভিন্ন বয়সের নারী -পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের হাতেও একাধিক ব্যাগ কিংবা লাগেজ। তারা ঢাকা, চট্টগ্রাম অথবা সিলেট যাবেন। এমন চিত্র নীলফামারীর সৈয়দপুর পাইলট স্কুলের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষমান দুরপাল্লার যাত্রীদের। নীলফামারীর সৈয়দপুরে দুরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড কিংবা যাত্রী ছাউনি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোন মাথাব্যথা। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুরপাল্লার যাত্রীদের। বর্তমানে শহরের পাইলট স্কুল, দিনাজপুর রোডের সিঙ্গার শো-রুম, আইয়ুব পেট্রোল পাম্প, স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তার পাশে বিভিন্ন পয়েন্টে দূরপাল্লার কোচ থেকে যাত্রী উঠা নামা করছে। এদিকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সামনে যাত্রী উঠা নামা করায় যে কোন মুহুর্তে লোকাল বাস শ্রমিকদের সাথে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগে শহরের ভিতরে শহীদ ডা:জিকরুল হক রোডে ছিল পরিবহনগুলোর নিজস্ব বাস কাউন্টার। সে সব কাউন্টার থেকেই যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে যাওয়া- আসা করত। কিন্তু ২০১০ সালের ২৯ জুন শ্যামলী পরিবহনের একটি নাইটকোচ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই রোডে তানিন প্লাস্টিক শোরুমে ঢুকে পড়ে। এতে হাফেজ নামের ৯ বছরের এক শিশু এবং একজন রিক্সাচালক ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হয়। ওই দূর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন শহরের বাইরে নির্ধারিত স্থানে দুরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড গড়ে তোলার দাবিতে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শহরের ভিতরে দুরপাল্লার কোচগুলোর প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদল শহরের পশ্চিমে কুন্দলে স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তার পাশে দুরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড করে দেন। কিন্তু ওই স্থান নির্ধারণ নিয়ে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়। একটি পক্ষ শহরের কুন্দল অন্যপক্ষ আইয়ুব পেট্রোল পাম্পের সামনে কোচস্ট্যান্ড গড়ে তোলার কথা বলেন। কিন্তু আজ অবধি পৌর কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট কোন জায়গায় দুরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড গড়ে তুলতে পারেনি। আর তাই শহরের উল্লেখিত পয়েন্টে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ওঠা নামা করছে। যাত্রী ছাউনি না থাকায় রাস্তাতেই যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সেখান নেই বসার ব্যবস্থা, নেই কোন টয়লেট। এতে বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের পড়েতে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। এছাড়া মহিলা যাত্রীদের গভীর রাতে রাস্তাতেই নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে যেকোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে। উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের আকলিমা খাতুন নামের এক যাত্রী বলেন, আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকুরী করি। বাবা নেই, মা অসুস্থ। তাই নিয়মিত আমাকে ঢাকা- সৈয়দপুর যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় রাত-বিরাতে রাস্তায় দাড়িয়েই দীর্ঘ সময় কোচের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় বখাটেদের বাজে মন্তব্যও শুনতে হয়।
উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের আরিফুল ইসলাম নামের আরেক যাত্রী বলেন, রেলওয়ে স্টেশনকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বিমানবন্দরকে করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক। কিন্তু আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি দুরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড কিংবা যাত্রী ছাউনি। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি। নিয়মিত সৈয়দপুর-চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে হয় আমাকে। অনেক সময় বৃষ্টির মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আখতার হোসেন বাদল বলেন, আমি পৌর মেয়র থাকাকালীন সময়ে কুন্দলে কোচস্ট্যান্ড করে দিয়েছিলাম এবং সেখনে নিরপত্তাপ্রহরীও নিয়োগ দিয়েছিলাম। কিন্তু একটি পক্ষ ওই স্থান নিয়ে বিতর্কের সৃস্টি করে। এরপর আমি বর্তমান পৌর পরিষদকে বহুবার স্ট্যন্ড করার কথা বললেও কর্ণপাত করা হয়নি।
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা বাস- মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহনোওয়াজ হোসেন সানু বলনে, বর্তমানে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন রাস্তার পাশেই দূরপাল্লার কোচ গুলোর যাত্রী উঠানামা করছে। এতে সন্ধ্যার পর ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া যে কোন মুহুর্তে লোকাল বাস শ্রমিকদের সাথে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একটি নির্ধারিত স্থানে কোচ স্ট্যান্ড গড়ে তোলার জন্য বহুবার বহু মিটিংয়ে আলোচনা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সৈয়দপুর পৌর পরিষদের প্যানেল মেয়র জিয়াউল হক জিয়া বলেন, শহরের অধিকাংশ ভূ-সম্পত্তি রেলওয়ের। আমরা কোচ স্ট্যান্ড করার জন্য নির্ধারিত একটি জায়গা খোঁজার চেষ্টা করছি। বর্তমানে শহীদ ডা: জিকরুল হক রোডের আগের জায়গাতেই কোচ যাত্রী ওঠানামা করার নির্দেশ দেয়া হয় এবং এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও নীলফামারী জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button