রাজনীতি

কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই সংঘর্ষ, ছাত্রলীগের ৩ নেতা বহিষ্কার

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ ঘটনার জেরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফসহ তিন নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

রবিবার (২৭ অক্টোবর) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বহিষ্কৃত অপর দুজন হলেন- রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি নয়ন মাহমুদ বিপ্লব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাহিয়ান খান জয় জানান, গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ আসিফ, নয়ন মাহমুদ বিপ্লব ও আজিজুল ইসলামকে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত শনিবার রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকসহ জেলা এবং মহানগরের নেতাদের সামনেই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ওই বিশৃঙ্খলার জন্য মহানগর ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়।

ওই সময় নানক বলেন, আওয়ামী লীগের শত্রু হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিএনপি জামায়াত এক সাথে হয়েও দলের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যারা এ সভায় গোলমাল ও হট্টগোল করলো তারা আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ হতে পারে না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাতে নগরীর বেতপট্টিস্থ কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরু হয়। সভায় ৩৩টি ওয়ার্ডের সভাপতি সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভার প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীর কবির নানক ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের কাছে দলের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, দলে বেশ কয়েকজন জামায়াত-শিবির নেতা অনুপ্রবেশ করেছেন। নানক অনুপ্রবেশকারীদের নাম জানতে চান। এসময় রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ছাত্রশিবির করতেন এবং তার শ্বশুর শাহ আকমল এখনও জামায়াতের রংপুর মহানগরীর একজন নেতা বলে জানান অভিযোগকারীরা। একথা শোনার পরপরই নানক মিজানকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।

এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা প্রকৌশলী শাহাদতকে জামায়াত শিবির বলে কয়েকজন চিহ্নিত করার চেষ্টা করলে তিনিএর তীব্র বিরোধিতা করেন।

শাহাদত বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। কোনোদিন জামায়াত-শিবির করিনি। অথচ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সম্মানহানি করা হচ্ছে।’

পরে দুইপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকা অবস্থায় মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সভাস্থলে প্রবেশ করেন। তারা শাহাদত হোসেনের অনুসারী। তাদের সঙ্গে অভিযোগকারীদের হাতাহাতি ও মারামারি শুরু হয়। পরে নানক ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে সভা শেষে নেতারা চলে যাওয়ার পর রাতে আওয়ামী লীগের মহানগর নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নুরুন নবী জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এছাড়া সভায় দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মন্ডলকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে রংপুরে শুদ্ধি অভিযান শুরুর কথা বলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button