বরিশাল বিভাগসারাদেশ

বিপর্যয়ের মুখে পর্যটন খাতের অর্থনীতি

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: করোনা ভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারি। এই মহামারি শুধু স্বাস্থ্য খাতেই নয় ঝাঁকি দিয়েছে গোটা অর্থনীতিকে। যা থেকে রক্ষা পায়নি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার অর্থনীতি। কোভিড-১৯’র প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই পর্যটন খাতের অর্থনীতি। এখানকার আবাসিক হোটেল-মোটেল সহ পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো চরম ভাবে লোকসানের মুখে পড়েছে এই ভাইরাসের কারনে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এখানে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক হোটেল মোটেল রয়েছে। কয়েকমাস বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের নির্দেশে পুনরায় স্বাভাবিক হলেও আগের মত দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা নেই। বন্ধকালীন সময়ে এসব হোটেল-মোটেলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়িরা। এছাড়া চরম লোকসানের মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেনীর ব্যবসায়ী। মানবেতর জীবনযাপন করেছে পর্যটন নির্ভর শ্রমিকরা। এই মহামারি প্রভাবে অনেকে পর্যটক নির্ভরশীল ব্যবসা গুটিয়ে অন্য পেশায় মনোনিবেশ করেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এবার ব্যবসায় যে ধ্বস নেমেছে, তা কাটিয়ে ওঠতে অনেক সময় লাগবে। তবে এতসব প্রতিকূলতার পরেও চলতি বছরের শুরুতে পর্যটনে নতুন গতি এসেছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস নতুন রূপ নেওয়ায় সেই গতি আবারও থমকে গেছে। বর্তমানে হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বেচা বিক্রি কমে গেছে কুয়াকাটার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
কুয়াকাটার একাধিক হোটেল মালিক জানান,করোনা ভাইরাসের কারনে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ট্যুরিষ্ট গাইড, পর্যটন নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ট্যুরিষ্টদের উপর নির্ভরশীল নি¤œ আয়ের মানুষ গুলো একেবারেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এখন তারা তাদের সংসার চালানো নিয়ে নতুন করে দুঃশ্চিন্তায় পড়েেেছন।
সরেজমিনে কুয়াকাটার গঙ্গামতি, লাল কাঁকড়ার চর, ঝাউবন, মিশ্রিপাড়া বৈদ্যবিহার, ইকোপার্ক, রাখাইন তাঁতশিল্প পল্লী, মিষ্টি পানির কূপসহ দর্শনীয় স্পট গুলোতে দূরের কোন পর্যটক নেই। যারা আছে তারাও কাছাকাছি এলাকার। বেলাভূমিতে ফুচকা, চটপটি, বাদাম, চানাচুর বিক্রেতাদেরও বেচা বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন চটপটি বিক্রেতারা।
কুয়াকাটা ফটোগ্রাফার মো.তৈয়ব মিয়া বলেন, লকডাউনের সময় আমরা একেবাইে বেকার হয়ে পড়েছিলাম। এখানে অন্তত দুই শত ফটোগ্রাফার রয়েছেন। আগের মত পর্যটক না থাকায় আয়ও কমে গেছে। কুয়াকাটা ট্যুরিজম অ্যাসোশিয়েশনের (কুটুম) সিনিয়র সহসভাপতি হোসাইন আমির বলেন, কুয়াকাটায় মাঝারি ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে চলতি বছরের শুরুতে পর্যটনে নতুন গতি ফিরতে শুরু করেছে।
কুয়াকাটা সমুদ্র বাড়ির রিসোর্ট এর পরিচালক জহিরুল ইসলাম মিরন জানান, আগের মতে পর্যটক নেই। রুম বুকিংও কমে গেছে। পর্যটক হিসেবে যারা আছে তারা বেশির ভাগই কাছাকাছির এলাকার। তবে বিশেষ কোন দিনে কিংবা সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকদের চাপ একটু বেশি থাকে। এছাড়া লকডাউন সময়ের বিদ্যুৎ বিল,স্টাফ বেতন ও হোটেল মেন্টেনেন্স খরচ বাবদ প্রতিমাসে লাখ টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সাবেক সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোনে আনু বলেন,বর্তমানে কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারীদের ব্যাবসা বানিজ্য মন্দা যাচ্ছে। করোনা গোটা পর্যটন খাতের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক হোটেল মোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে অন্তত এক হাজারের মতো কর্মচারী রয়েছে। তাদের পরিবারের ভরণ-পোষন মালিকপক্ষকেই দেখতে হচ্ছে। যা এখন আমাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বার্তমানে খুবই খারাপ আবস্থা চলছে। আগের মতো পর্যটক আসে না। পর্যটক কম আসায় আমাদের হোটেল ব্যবসায় মন্দা ভাব বিরাজ করছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button