ভারতের উজান থেকে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল, খুলে দেওয়া হলো তিস্তা ব্যারেজের সব’কটি গেট
নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : ভারতের পাহাড়ী ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজের ৪৪ টি গেটই খুলে দেওয়া হয়েছে। অসময়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর দুইপাশের জমির ফসল ও বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আতঙ্গকিত হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের লোকজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র হতে জানা যায়, তিস্তা নদীর পানি প্রবাহের বিপদসীমা ৬০.৬০ মিটার। গতকাল বুধবার সকালে প্রবাহিত হয় ৫২.৫২ মিটারে। মাত্র দশমিক ৪ মিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার দোয়ানিতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে নদীর দুইধারের কয়েক হাজার ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়ে জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা ও আতঙ্কিত কৃষক এখন চিন্তিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। আসগর নামের ক্ষতিগ্রস্থ এক কৃষক বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছিলাম। বাম্পার ফলন হওয়ায় মনটা ভরে গিয়েছিল। কিন্তু কে জানতো অসময়ে এভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেল। জানিনা ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করব। আনোয়ার নামের একজন বলেন,এই মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমনের মধ্যে বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় কিভাবে থাকব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। দোয়ানি ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক বলেন,কয়েক দিন আগের সুষ্ক মরা নদী মাত্র কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ এবং ভারতের পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানির ভরা যৌবনে নদীর দুইপাশের সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, তিস্তা এখন কৃষকসহ এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা শুকনো মৌসুমে ফসল চাষে পানি পাওয়া না গেলেও অসময়ে প্লাবিত হয়ে ফসলের ক্ষতি করছে। এ ব্যাপারে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, নদীর পানি প্রবাহ উঠা-নামা করছে। সকালে ৬০.৫২ মিটার উচ্চতায় প্রবাহ হলেও বিকেলে তা নেমে আসে ৬০.৩২ মিটারে। তিনি আরো জানান , ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে এবং আমাদের দেশে ওই এলাকায় তিস্তা নদীতে ব্যারেজ নির্মান করা হয় নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য। যাতে করে শুকনো মৌসুমে নদীর পানি ব্যবহার করে ফসল চাষ করার সুবিধা এবং বর্ষা মৌসুমে ফসলকে রক্ষা করার সুযোগ পায় কৃষকেরা।
জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে নেমে আসায় নদীর পানি হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সর্বোচ্চ সতর্কাতায় রাখা হয়েছে প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সকলকে।