সারাদেশ

যে কারণে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে হত্যা

ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ফেনীর এক যুবক। ফেনীসহ সারা দেশে আলোচনা সৃষ্টি করেছে এই ঘটনা। কেন এই নৃশংস ঘটনা জানতে চাচ্ছে মানুষ। এ নিয়ে নিহত ও ঘাতকের পরিবারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। নিহত তাহমিনা আক্তারের স্বজনরা বলছেন, যৌতুকের দাবিতে অনেক দিন ধরে নির্যাতনের একপর্যায়ে এবং নিজের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ঢাকতে ওবায়দুল হক টুটুল (৩২) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। টুটুলের স্বজনরা বলছেন, অবৈধ সম্পর্ক ছিল তাহমিনার। আর প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। তবে টুটুলের মানসিক সুস্থতার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই দম্পতির মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।

বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ১টার দিকে ’টুটুল ভুইয়া’ নামের একটি  ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায় ওই ঘাতক। ফেনী পৌরসভার উত্তর বারাহীপুর ভুইয়া বাড়িতে নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। হত্যার পর নিজেই ৯৯৯ ফোন দেয় টুটুল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে। তাহমিনার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও ফেসবুকে প্রচার চালানো মোবাইলও জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় বুধবার রাত ১২টায় নিহত তাহমিনার বাবা সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে ঘাতক টুটুলের নাম উল্লেখ করে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে আমার মেয়ে তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে ওবায়দুল হক টুটুলের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এরইমধ্যে টুটুল আমার কাছ থেকে বেশ কিছু টাকাও নেয়। কিন্তু আরও টাকার জন্য চাপাচাপি করলে আমি তা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এ কারণেই সে আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শস্তি চাই।’

নিহতের বোন রেহানা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকায় থাকা অবস্থায় অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে টুটুল। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়। টুটুল মাদকাসক্ত। তার চরিত্র খারাপ। বিয়ের আগেও বহু মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ২০১৩ সালে আমার বিয়ের সময় তাহমিনার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্কের সুবাদে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে আমার বোনকে সে মারধর করতো।’

টুটুলের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন মেহেদী এ অভিযোগ অস্বীকার করে তাহমিনার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, ‘ভাবির (তাহমিনা আক্তার) অন্য ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক থাকায় আমার ভাই উত্তেজিত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, ওবায়দুল হক টুটুল উত্তর বারাহীপুর এলাকার গোলাম মাওলা ভুঞার ছেলে। তার দেড় বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘টুটুল ঢাকায় একটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করে বলে জানতাম। সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী বাড়িতেই থাকতেন। পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে হয়েছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের পরিবারে প্রায়ই ঝগড়া হতো শুনেছি।’

ফেসবুক লাইভে ঘাতক টুটুল যা বলেন

হত্যার আগে ফেসবুক লাইভে টুটুল ভুইয়া বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন, আজ আমার কারণে আমার পরিবার ধ্বংস। যার কারণে ধ্বংস আজ তারে আমি এ মুহূর্তে ধ্বংস করে দিলাম। আমি চেষ্টা করেছি, অনেক চেষ্টা করেছি, পারি নাই। আল্লাহর ওয়াস্তে সবাই আমাকে মাফ করে দেবেন। আমার এতিম মেয়েটার খেয়াল রাখবেন। আমার ভাইবোনগুলোর খেয়াল রাখিয়েন। আমার পরিবার, ভাইবোনগুলার কোনও দোষ নাই। কেউ এটাতে সম্পৃক্ত না। আমি আমার আজকের এ ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী।’

এরপর দা হাতে নিয়ে ছুটে গিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে টুটুল। তবে খুন করার লাইভ ভিডিওটি ঘণ্টাখানেক পর আর টুটুলের প্রোফাইলে পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, টুটুলের প্রোফাইলে লাইভ ভিডিও তারা পায়নি। তবে তার পোস্টগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত সাজেদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিহতের লাশের সুরাত হাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হবে। ঊর্ধ্বতন অফিসারদের নির্দেশনা মোতাবেক মামলা তদন্ত হবে।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button