সারাদেশ

রাতের আধারে বাড়ি বাড়ি ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেলেন ডিসি হারুন

নওগাঁ প্রতিনিধি: রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। চারদিক নীরব-নিস্তব্ধ দু’একটি ট্রাক মাঝেমধ্যে ছুটে চলছে। করোনা দুর্যোগে এলাকার মানুষ ঘরবন্দি। নীরব-নিস্তব্ধ পথ ধরে শুক্রবার রাতে নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মাহাবুবুর আলম নওগাঁ শহরের বাঙ্গাঁবাড়িয়া বিহারী কলোনীতে ত্রান নিয়ে ছুট চলেছেন। সেখানে ২৫টি কর্মহীন পরিবারকে ঘর থেকে ডেকে বের করে তার হাতে একটি খাবারের বস্তা ধরিয়ে দেন। যেখানে রয়েছে- চাল, ডাল, আলু, লবন, তেলসহ অন্যান্য দ্রবাদি।
শুক্রবার দুপুরে উত্তপ্ত রোদে নওগাঁ শহরের বাঙ্গাঁবাড়িয়া বিহারী কলোনী মাঠে বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম একটি টিনের উপর নষ্ট ভাত পানিতে পরিস্কার করে শুকাচ্ছিলেন। আর এমন দৃশ্যের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম নওগাঁ শহরের বাঙ্গাঁবাড়িয়া বিহারী কলোনী মহল্লার ছোট যমুনা নদীর গাইড ওয়াল সংলগ্ন সরকারি জমিতে খুপড়ি ঘরে গত কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন। স্বামী নুরু মিয়া মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। মেয়ের বয়স যখন ৮মাস তখন স্বামী মারা যায়। বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ করে জীবন চলত তার। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর এখন একা থাকেন। বয়স হওয়ায় তার এখন ভিক্ষা করে দিন চলে তার।

বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ঘরে ২ কেজি চাউল ছিল। রাতে একজন ভাত দিয়েছিল। সকালে কিছুটা নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট ভাত ফেলে না দিয়ে পরিস্কার করে রোদে শুকাচ্ছিলাম। যাতে পরে অন্য চালের সাথে রান্না করে খেতে পারি। হঠাৎ করেই শুক্রবার বিকেলে দুইজন চাল, ডাল দিয়ে গেলো। আবার রাতে এসে ডিসি স্যার বস্তায় করে বিভিন্ন ধরনের খাবার দিলেন। ডিসি স্যারকে কাছে পেয়ে অবলিলায় তার অসহায়ত্বের কথা জানালেন। ঘরে এখন প্রায় ২০/২২ কেজি চাউল হয়েছে।
কলোনির গৃহবধু শিউলি বলেন, স্বামী অটোরিক্সা চালায়। কিছুদিন থেকে অটোরিক্সা চালানো বন্ধ আছে। রোজগার না থাকয় বাড়ির চার সদস্য চলা খুব সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমাদের কেউ কোন খোঁজ খবর নিতে আসেনি। সাবিয়া বেগমের সুবাদে ডিসি স্যার আমাদের খাবার দিয়েছেন। আশা করছি এই খাবার দিয়ে সপ্তাহ চলে যাবে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, অনেক পরিবার যারা কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে আছেন। কারো কাছে চাইতে পারেন না। গভীর রাতে এসে ওইসব পরিবারের মাঝে ত্রান বিরতণ করা হচ্ছে। এতে করে জনসমাগমের ভীড় হবে না। খাবারের অভাবে আমাদের কেউ অভুক্ত থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট বরাদ্দ আছে এবং বরাদ্দ আসছে।
তিনি আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনুগ্রহ করে আপনারা সকলে নিজ নিজ বাড়িতে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। করোনার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করুন। কারো ঘরে খাবার না থাকলে আমাদেরকে অবহিত করুন। আমরা খাবার পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button