সাঁতার জানে না ৮০ শতাংশ শহুরে কিশোর-যুবা
বগুড়ায় পানিতে ডুবে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে
বগুড়ায় পানিতে ডুবে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। প্রায়ই নদী, জলাশয় বা পুকুরে ডুবে মানুষের মৃত্যু’র খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত দু’বছর ৫ মাসে জেলায় পানিতে ডুবে ৩৪ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে শিশু-কিশোর ও যুবাদের মৃত্যু’র হারই বেশি। যারা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে সিংহভাগই শহুরে শিশু-কিশোর সাঁতার জানে না। যে কারনে দিন দিন মৃত্যু’র হার বাড়ছে।
সেইসাথে বগুড়ায় পানিতে ডুবে নিখোঁজ বা মারা যাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মরদেহও উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কেননা, ফায়ার এন্ড সিভিল ডিফেন্স বগুড়া অফিসে ডুবুরি ইউনিট নেই। কেউ নদী বা জলাশয়ে ডুবে গেলে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অফিসের ডুবুরি দলকে ডেকে আনতে হয়। তবে খবর পেয়ে বগুড়ায় আসতে ডুবুরি দলের ৭-৮ ঘন্টা লেগে যায়। ততক্ষণে পানিতে নেমে মরদেহ খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় ডুবে যাওয়া মরদেহ উদ্ধারই করা যায় না। পানিতেই চিরতরে সলিল সমাধি হয় অনেকের।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স বগুড়ার সহকারি পরিচালক এমডি আব্দুল মালেক জানান, গত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৫ মে পর্যন্ত প্রায়ই আড়াই বছরে জেলার বিভিন্ন স্থানে নদী বা জলাশয়ে ডুবে যে ৩৪ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু, কিশোর, তরুন ও যুবা। এরমধ্যে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু’র ঘটনা সারিয়াকান্দি এলকায় যমুনা নদীতে। শহর থেকে সারিয়াকান্দি বেড়াতে গিয়ে অনেকে যমুনা নদীতে নামে, বা নৌকা ভ্রমণ করে। কোন কোন সময় নদীতে নৌকা ডুবিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেকে ডুবে গিয়েও মারা যায়।
তাদের কাছে থাকা পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত প্রায় আড়াই বছরে সারিয়াকান্দিতে পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৩ জন। সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা, দিঘলকান্দি, কুতুবপুর, পাকুরিয়ার চর,ফুলবাড়ি, হিন্দুকান্দি, নিজ বাবুরবাড়ি, কামালপুর, মথুরাপাড়া, নিজ বলাইল,হাতিয়াবাড়ি, নিজ বুবুরবাড়ি এলাকায় পানিতে ডুবে তারা মারা যায়। একই সময়ে ধুনটেও পানিতে ডুবে মারা গেছে ৭ জন। ধুনটের ফরিদপুর, পেচিবাড়ি,গোপালনগর, বিল চাপড়ি, দীঘলকান্দি, বারিয়া ও ভান্ডারবাড়ি এলাকায় ওই ৭ জন মারা যায়। এ ছাড়া সোনাতলা, গাবতলি ও শিবগঞ্জ এলাকাতেও পানিতে ডুবে প্রাণহানির ঘটেছে আর ১৪ জনের। সর্বশেষ গত ৭ মে সারিয়াকান্দি উপজেলার চরবটিয়া চরের কাছে যমুনা নদীতে ডুবে এস. এম মুগনি আলী ওরফে ছোট (১৪) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থি নিখোঁজ হয়। এর একদিন পর ডুবুরি দল তার মরদেহ উদ্ধার করে। সে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার নূর মসজিদ লেনের শাহ মোহাম্মদ আলীর একমাত্র ছেলে। মুগনি আলী সাঁতার জানতো না। বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির এই শিক্ষার্থি মা, বাবার সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে সারিয়াকান্দিতে বেড়াতে গিয়েছিল।
এ দিকে, গত দু’দিনে গাবতলিতে পানিতে ডুবে আরও তিন শিশু মারা গেছে। এর মধ্যে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকেও গাবতলিতে নারুয়ামালার প্রথমাছেও এলাকায় ইছানদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে মিরাজ (৮) নামে এক শিশু মারা যায়। এ ছাড়া একই উপজেলার দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের পাড়া বাইশা গ্রামে একটি ডোবার পানিতে পড়ে মিরাজ (৫) ও আয়েশা (৫) নামে চাচাতো দুই ভাইবোন মারা যায়।
এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ সুইমিং সেন্টার বগুড়ার সাধারন সম্পাদক মো: মাসুদ রানা বলেন, অধিকাংশ গ্রামের তরুন-যুবারা সাঁতার জানলেও শহরের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ শিশু-কিশোর, তরুণ ও যুবক সাঁতার জানে না। তাছাড়া শহরে তাদের সাঁতার শেখার সুযোগও কম। শহরে পর্যাপ্ত পুকুর বা জলাশয় নেই। যে কারনে সাঁতার না জেনেও নদী বা জলাশয়ে নেমে তাদের প্রাণহানি ঘটছে বেশি। পারিবারিক অসতর্কতা বা শিশুদের প্রতি নজরদারি না থাকার কারণেই অধিকাংশ মৃত্যু হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, শুধু বগুড়াই নয়, সারাদেশেই পানিতে ডুবে মৃত্যু’র ঘটনা ৬৭ শতাংশ বেড়েছে বলে এক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় বলা হয়েছে। গেল বছর ২০২১ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এভাবে মোট ১ হাজার ৩৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২০২০ সালে যেখানে এ ধরনের ঘটনায় ৮০৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে ২০২১ সালে তা বেড়ে ১ হাজার ৩৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এ দুই বছরে ১৮ বা তার কম বয়সী ১ হাজার ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে পানিতে ডুবে মৃত্যু’র ৪৭ শতাংশ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ৫৩ শতাংশ মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে আসে না।