মুনাফার ভাগ দেবে না ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড
মোটা অঙ্কের মুনাফা করলেও তার কোনো ভাগ বিনিয়োগকারীদের দিতে চায় না পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড পরিচালনা পর্ষদ। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও লভ্যাংশ হিসাবে কোম্পানিটির পর্ষদ শুধু বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির পর্ষদ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে শেয়ারহোল্ডারদের শুধু ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ না দিলেও অর্থবছরটিতে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড মোটা অঙ্কের মুনাফা করেছে বলে আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ২ টাকা ৭৫ পয়সা হারে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছে ৫৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোম্পানিটি যে পরিমাণ মুনাফা করেছে তাতে অনায়াসে শেয়ারহোল্ডারদের নগদ ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারত। কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা থেকে বঞ্চিত করে শুধু শেয়ার ধরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সামনের বছর কোম্পানিটির শেয়ারের সংখ্যা বাড়বে। একটি কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা যত বাড়ে নগদ লভ্যাংশের হার তত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসই’র এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, কয়েক বছর ধরে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশই শেয়ারহোল্ডারদের বছরের পর বছর লভ্যাংশ হিসাবে শেয়ার ধরিয়ে দিচ্ছে। এতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে যে দুরবস্থা বিরাজ করছে সেজন্য কোম্পানিগুলোর গড়পড়তা লভ্যাংশ হিসাবে বোনাস শেয়ার দেয়া অন্যতম কারণ।
তিনি বলেন, একজন প্রকৃত বিনিয়োগকারী বছর শেষে কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশা করেন। কিন্তু বছর শেষে যখন ভালো মুনাফা দেখানোর পরও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো নগদ লভ্যাংশ দেয়া হয় না, তখন তা নিয়ে সন্দেহ ওঠা স্বাভাবিক। ভালো মুনাফা করা কোম্পানি কেন শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিচ্ছে না, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি প্রতি বছরই লভ্যাংশ হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার দিয়ে আসছে। তবে শেষ দুই বছর বোনাস শেয়ার দেয়ার হার বেড়েছে। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়াহোল্ডারদের ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। তার আগের হিসাব বছরে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। তবে ২০১৬ ও ২০১৫ সালে কোম্পানিটি থেকে বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ হিসাবে শুধু বোনাস শেয়ার পেয়েছিল।
নিয়মিত বোনাস শেয়ার দেয়া কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ারের সংখ্যা ১৯ কোটি ৯৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৩টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৯১ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। তবে এক বছর আগে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৩১ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ার ছিল। অর্থাৎ শেষ বছরে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা প্রায় এক শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।
উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ২০১৮ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির ১৯ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। চলতি বছরের আগস্ট শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দুই শতাংশের ওপরে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে।
উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরের আগস্টের হিসাব অনুযায়ী, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫১ দশমিক ৮৪ শতাংশ রয়েছে। যা ২০১৮ সালের জুন শেষে ছিল ৪৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
এদিকে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়ার জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড আগামী ২৩ নভেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ডেকেছে। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ নভেম্বর।