জাতীয়

আজই পদত্যাগ করছেন মুরাদ?

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হচ্ছে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।  সেই নির্দেশের কথা ইতোমধ্যে তাকে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ মঙ্গলবারের মধ্যেই মুরাদ হাসানের পদত্যাগের কথা রয়েছে।  বিতর্কিত অডিও-ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান কখন পদত্যাগ করছেন সেদিকে দৃষ্টি সবার।

এদিকে মুরাদ হাসানের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।  এ কারণে তার সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।  কখন পদত্যাগ করছেন সেই সময় এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

আজ মুরাদকে পদ্যাগের নির্দেশ যে দেওয়া হয়েছে সেটি নিশ্চিত করেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  সোমবার রাতে রাজধানীর সরকারি বাসভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে।

ডা. মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিই। আগামীকালের (আজ) মধ্যেই তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের কারণে মুরাদ সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রীর কিছু অডিও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও সারা দেশে দলের নেতাকর্মীরা তার ওপর বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ।  এ ঘটনায় বিএনপিসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা ডা. মুরাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

বিএনপির এক শীর্ষ নেতার পরিবারকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের পাশাপাশি চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে মুরাদ হাসানের টেলিফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়।  নায়িকার সঙ্গে ফোনালাপে অশ্লীল কিছু থাকলে তা সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির আইনজীবী রেজা ই রাকিব। তিনি বলেন, সরকার, ইন্টেলিজেন্স (গোয়েন্দা সংস্থা) বা কোর্ট থেকে যদি কোনো ইন্সট্রাকশন (নির্দেশনা) আসে বিটিআরসি অবশ্যই এটি নামিয়ে ফেলবে।

বিটিআরসি এজ পার ল’ যেটা তাদের ক্ষমতা, সেটা তারা করবে।

কয়েক দিন আগে ইউটিউবে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য দেন ডা. মুরাদ হাসান।

বিএনপি তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায়। সোমবার এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।

এদিকে ডা. মুরাদের অডিও ভাইরালের সত্যতা স্বীকার করেছেন মাহিয়া মাহি।  সোমবার সৌদি আরব থেকে ফেসবুক লাইভে মাহি বলেন, ঘটনাটি দুই বছর আগের।

সে সময়ে তার বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার ও ভাষার জবাব আমার জানা ছিল না।

সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে প্রথম রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ ঘটনার পরপর প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের পুরোনো কিছু ভিডিও ভাইরাল হয় নেট মাধ্যমে।  জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ অনেক রাজনীতিকও এর নিন্দা জানিয়েছিলেন।

তখন থেকেই একের পর এক বিকৃত অশালীন বক্তব্য, প্রতিহিংসামূলক আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি সব মিলিয়ে ভাইরাল হয়ে আলোচনায় ছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির সাবেক এক নারী এমপিকে ‘মানসিক রোগী’ বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি।

পেশায় চিকিৎসক জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় যখন চারদিকে সমালোচনা শুরু হয় তখনই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরেই চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন মুরাদ। চট্টগ্রামে এক বন্ধুর বাসায় ওঠার কথা রয়েছে তার।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ২০০০ সালে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি হন মুরাদ হাসান। তিন বছর পর আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পান।

৪৭ বছর বয়সি মুরাদ তার নিজের এলাকা জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক’। তার বাবা অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

এদিকে ডা. মুরাদ হাসানের ‘অপ্রত্যাশিত ফোনালাপে’ বিব্রত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় দুই নেতা বলেন, একজন রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে মানুষের জন্য কাজ করা।

মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব ও অবস্থান বিসর্জন দিয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করলে শুধু সেই ব্যক্তিই যে সমালোচিত হন তা নয়, তার দল ও দলের নেতারাও বিব্রত হন।

এদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্রের দাবি- মন্ত্রিত্বের পরে দলের পদ এবং আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে মুরাদকে। এতে তিনি হারাতে পারেন সংসদ সদস্য পদও।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button