অর্থনীতি

লাগামছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার : মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের দাবি

সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় ঈদের আগে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার বেশ নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে এখন এই বাজার লাগামছাড়া হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই সবরকম পণ্যের সরবরাহ থাকলেও মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এটি নিম্নআয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।

হুট করে  নিত্যপণ্যের বাজারের এই বেহাল দশায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ঈদের পর পাইকারি বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমায় বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। আর বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় বিভিন্ন অজুহাতে এর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে মনে করছেন ক্রেতারা। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তারা  নিয়মিত বাজার তদারকি করার কথাও জানান।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, খিলগাঁও, রামপুরার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে শনিবার (২৪ আগস্ট) এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ রয়েছে। এছাড়া পাওয়া যাচ্ছে শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, শসা, টমেটো, বেগুনসহ আরও বিভিন্ন সবজি। কিন্ত তার দাম বেশ চড়া। আর মসলাজাতীয় পণ্যের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।  এছাড়া মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমলেও গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে।

এদিকে ইলিশের বাজার খানিকটা চড়া হলেও অন্য মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর মিনিকেট চাল, নাজিরশাইল চাল ও খোলা ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে। তবে ডিম ও ডালের দাম অপরিবর্তিত আছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিকেজি বেগুন ৫০ থেকে ১০০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা  ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙা  ৬০ থেকে ৭০ টাকা, উস্তা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৯০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর ছড়া ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচাকলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা হালি, পেঁপে  ৩০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১২০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকা,লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ঈদের আগে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ থাকলেও এখন অনেকটা কম। এছাড়া সরবারহ কম থাকায় অনেক আড়ৎ বন্ধ আছে। তাই দাম কিছুটা বাড়তি। তবে কয়েকদিন পর বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়লে এই তখন দাম কমবে।

তবে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এখন শীত না হলেও শীতের সব সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে দাম বেশি হবে কেন? আর বাজারে কোনো সবজির ঘাটতি নেই। ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় নিজেরাই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মসলাজাতীয় পণ্য। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে  দেখা গেছে। অথচ সপ্তাহ খানেক আগেও যা ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। আর রসুন কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ২০০ টাকা, ভারত থেকে আমদানি করা রসুন ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আদার দামও কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। দেশি আদা ২০০ থেকে  ২১০ টাকা, আমদানি করা আদা (মোটা) ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর কাঁচা মরিচ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ঈদের পর নতুন করে বাজারে মালামাল না আসায় সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মোকামে সব মালের দাম চড়া হওয়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

আর বিক্রেতাদের দিকে আঙুল তুলে ক্রেতারা বলেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এতে তারা লাভবান হলেও আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

খিলগাঁওয়ে বাজার করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, ঈদের আগে সরকারিভাবে বাজার তদারকি করায় দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে আবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

মালিবাগের এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন মোকামে মালামাল সরবরাহ নাই, প্রতি ঈদের পর এ পরিস্থিতি হয়। এজন্য মোকামে দাম বেশি যার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে। তবে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে আহামরি দাম বাড়েনি।

তবে জিরা, জয়ত্রী, গোল মরিচ, এলাচ দারুচিনির দাম অপরিবর্তিত আছে। বাজারে এলাচ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা, জিরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, গোল মরিচ ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, জয়ত্রী ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা, লবঙ্গ ৮৫০ টাকা, দারুচিনি ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা হলুদ ও মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

তবে নিত্যবাজারে কমেছে বাজারে দাম কমেছে সব রকম মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরে, লেয়ার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এদিকে গরু ও খাসির বাজার বেশ চড়া। প্রতিকেজি গরুর মাংস ঈদের আগে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৬০০ টাকা কেজি দরে, খাসির মাংস ৮০০ টাকা আর মহিষের মাংস ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাংস ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদের আগে গরুর সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কম ছিল। তবে এখন গরুর আমদানির চেয়ে মাংসের চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে।

আর বেড়েছে চালের দামও। মিনিকেট চাল কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। খোলা ভোজ্যতেল (সয়াবিন) কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজি দরে। তবে অপরিবর্তিত আছে বোতলজাত তেলের দাম। আর আগের মতোই আছে ডিম ও ডালের বাজার।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button