জাতীয়লিড নিউজ

কাল ঈদ

ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে বিশ্বের মুসলমানদের আনন্দ উদযাপনের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা কাল রবিবার। অব্যাহত অতিমারি এবং দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বন্যার কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করলেও ঈদের আনন্দে তা খুব বাদ সাধতে পারেনি। আরবি জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ১০ দিন আগে থেকেই ঈদুল আজহার দিন নির্ধারিত থাকে। এই ১০ দিন নানা রকম পুণ্যকর্মের মধ্য দিয়ে কাটায় মুসলমানরা।

সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে এই ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে। ঈদের দিন ছোট-বড় সবাই উৎসবের আমেজে ঈদগাহে নামাজ আদায় করে। নিজের ও পরিবার-পরিজনসহ দেশবাসী তথা মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করে সবাই।

 

বরাবরের মতো এবারও পরিবারসমেত ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়িতে ফিরছে রাজধানীর বহু মানুষ। গত কয়েক দিন ধরেই বাস, ট্রেন, লঞ্চে লাখো মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে।

কোরবানির ঈদের আগে পশু কেনা, তার পরিচর্যা করার মধ্য দিয়ে যে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়, শহুরে জনপদে এবারও তা দেখা যাচ্ছে। ক্রেতারা হাট থেকে দর-কষাকষি করে পছন্দের পশুটি কিনে গলায় জরির মালা, শিংয়ে রাংতা জড়িয়ে দড়ি ধরে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। সাত থেকে ১০ দিন আগে থেকেই গবাদি পশু ও পশুখাদ্যের সমাবেশ দেখা গেছে পাড়ায় পাড়ায়। পশুর হাঁকডাক আর তাদের যত্ন-আত্তি নিতে মানুষের ছোটাছুটিও নাগরিক পরিবেশে সৃষ্টি করছে অন্যরকম আবহ। গ্রামের অনেক গেরস্ত অবশ্য যত্নে লালন করা নিজের প্রিয় কোরবানির পশুটিকে শেষ সময়ে ভালোমতো খাইয়ে-দাইয়ে আরেকটু প্রস্তুত করছে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে করোনা মহামারির ভবিষ্যৎ সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে করোনা মহামারি ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চলমান যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় এবং ঈদ উৎসবে শামিল হতে পারে, সে লক্ষ্যে তিনি দেশের বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

দেশে আবারও করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, চলমান লোড শেডিং আর করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার আট দফা নির্দেশনা দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদ ও ঈদগাহের অজুখানায় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের নামাজে কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর কাতার করতে হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করতে নিষেধ করা হয়েছে। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণেরও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

ঈদের প্রাক্কালে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৯ জেলায় বন্যায় প্রায় ৭২ লাখ মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাদুর্গত অনেক এলাকা এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে যে পরিবারগুলো বাড়ি ফিরতে পেরেছে তারাও বন্যায় ভেসে যাওয়া মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু মেরামত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। বন্যার কারণে আয়-রোজগার হারানো শ্রমিক এবং ফসল হারানো প্রান্তিক কৃষককে সামলে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তার পরও ঈদের একটি দিন সব মানুষ সাধ্যমতো আনন্দেই কাটাতে সচেষ্ট থাকবে। পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই থাকুক না কেন মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবে। এ দেশে কোরবানির ঈদ বলে বেশি পরিচিত পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান মর্মবাণীই হলো আত্মত্যাগ। নিজের সামান্যটুকু থেকেও প্রতিবেশী ও আত্মীয়-পরিজনকে বিলিয়ে দেওয়া সেই মহিমাময় ত্যাগের একটি রূপ। হজরত ইবরাহিম (আ.) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাঁর নির্দেশে প্রাণপ্রিয় পুত্রকে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। সেই ত্যাগকে স্মরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সারা দুনিয়ার মুসলমানরা পশু কোরবানি করে। চলমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লোভ, হিংসা ত্যাগ করে ভেতরের পশুত্বকে কোরবানি করারই উপযুক্ত সময় এটি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button