সুনামগঞ্জে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ধরে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা
টানা ভারী বৃষ্টিপায় ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট সিলেট বিভাগের বন্যা দেশের আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। উজান থেকে আসা ঢলে এই বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। ওই জেলাসহ ১৬ উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্যা আক্রন্তসহ উদ্ধার কাজে নিয়োজিত টেলিযোগাযোগ সেবা গ্রাহকেরা।
তবে পোর্টেবল রাউটার দিয়ে বিটিএস চালু রাখার মাধ্যমে মোবাইল অপারেটররা এবং ব্যাটারি ও জেনারেটর ব্যাকাআপ এবং উঁচুস্থানে র্যাক ও সার্ভার স্থানান্তরের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সূত্রমতে, আক্রান্ত এলাকায় বেসরকারি টেলিসেবাদাতাদের মধ্যে গ্রামীণফোনের ছয় শতাধিক, রবি’র দুই শতাধিক ও বাংলালিংকের শতাধিক বিটিএস বিদ্যুত বিচ্ছিন্নতায় পড়েছে। সকাল থেকেই বিদ্যুত না থাকায় অপারেটররা ব্যাটারি-জেনারেটর দিয়ে নেটওয়ার্ক সচল রাখারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।
নেটওয়ার্ক সচল রাখার এই সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মধ্যেও ওই এলাকায় ১১০টি বিটিএস বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে একারণে জেনারেটর দিয়ে এখন পর্যন্ত সেবা সচল রাখার শেষ প্রচেষ্টা চলছে এবং এ কাজে বিটিআরসি সর্বত্মক সহযোগিতা করছে বলে জানিয়ছেন বাংলালিংক এর চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, জেনারেটরের ফুয়েল সংগ্রহ করে তাদের শতাধিক কর্মীর টিম নৌকা-ভ্যালা, এমনকি কোথাও কোথাও গলা পানি ভেঙে এই সেবা অক্ষুন্ন রাখতে চেষ্টা করছেন।
অপর মোবাইল অপারেটর রবি’র কোম্পানি সেক্রেটারি এবং চিফ কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম জানিয়েছেন, তারা পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে পরিস্থিত সামাল দিতে চেষ্টা করছেন। দুর্যোগ সময়ে গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ধরে রাখতে বিশেষ টিম কাজ করছে বন্যাকবরিত এলাকাগুলোতে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও দেশের বাইরে থেকে সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোর থেকেই তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। যে নাম্বারেই কল করা হচ্ছে সেটিই বন্ধ দেখাচ্ছে। সেসময় ঘণ্টাখানেক আগেও যার মোবাইলে ৮০ ভাগ চার্জ ছিল, সেই মোবাইল নম্বরটিও অচল দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় স্বজনদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা ভীষণ দুশ্চিন্তা ও শঙ্কায় পড়েছেন।
মাঝেমাঝে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া গেলেও তা কয়েক সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের শিক্ষক জাফর আহমেদ জানান, ‘আমার বাসায় বুকসমান পানি। আমার ছয়মাস বয়সী মেয়ে ও স্ত্রীকে ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। বিছানা সহ সব আসবাবপত্র পানির নিচে। পানির কমার লক্ষণ দেখছি না।’
ফেসবুকের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তিনি জানান, হঠাৎ ডাটা সংযোগ পাওয়ায় তিনি মেসেজ ডেলিভার করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু কাউকে কল করে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামীনফোন, এয়ারটেল, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক—কোনো অপারেটরেই নেটওয়ার্ক নেই।
এমন পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জে দ্রুত টেলিযোগাযোগ সেবা না দিতে পারলে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়শন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, দ্রুত সুনামগঞ্জে টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সেবা দিতে না পারলে আটকে পড়া মানুষেরা যোগাযোগ করতে পারবে না। এমনকি সেনাবাহিনীর উদ্ধার কর্মীকেও খবর জানাতে পারবে না।
এদিকে মোবাইল সংযোগ বাধগ্রস্ত হলেও আক্রান্ত এলকায় বিশেষ ব্যবস্থায় এখনো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবস্থা সচল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি জানিয়েছেন, ওই এলকায় ২ লাখের মতো আইএসপি সেবাগ্রহিতার রয়েছেন। বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ গ্রহাককে সেবা দিতে পারছেন। সেবা চালু রাখতে আইএসপিএবি সদস্যদের সেক্রেটারিয়েট থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।