জাতীয়রাজনীতিলিড নিউজ

উন্নয়নের রোল মডেল হল ঘরে ঘরে ক্যাসিনো

আওয়ামী লীগ নেতারা বাড়ি বাড়ি জুয়ার আসর, ক্যাসিনো বসিয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশ ধ্বংস করে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে সরকার। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্যথায় যে সংকট তৈরি হবে তার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্রের মুক্তি সম্ভব নয়। সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের সাজা বাতিল ও অবিলম্বে নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে মঙ্গলবার বিকালে এই সমাবেশ হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের সভাপতিত্বে। পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামীম সিদ্দিকীর ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। মির্জা ফখরুল বলেন, ১২ বছর ধরে জুয়া, ক্যাসিনো চলছে। সরকার ধরতে পারেনি। এখন যখন ধরা পড়ে গেছে, তখন বলছে বিএনপি সরকারের আমল থেকে এটা চলে আসছে। তাহলে ১২ বছর কি তারা আঙ্গুল চুষছিল? এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো।

জুয়ায় ভাসছে সারা দেশ। দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, প্রতিদিন দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের সবাই লুটেরা। মেগা প্রকল্পের নামে মেগালুট হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও একজন রোহিঙ্গাকেও সরকার ফেরাতে পারেনি বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব।

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া- এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নেত্রী যখন সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়ান, তখন চারদিকে একটা নূর ছড়িয়ে পড়ে। এই নূর হচ্ছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নূর, গণতন্ত্রের নূর, ধর্মের নূর। ইতিহাস সৃষ্টি করা এই নেত্রীকে মুক্তি দিতেই হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্রের মুক্তি সম্ভব নয়।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের এই সরকার কোনো সরকার নয়। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতি করেছে।

রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে ভোট ডাকাতি করেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে, সুচিন্তিতভাবে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। তারা সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিচ্ছে। সংসদ নাই, একটি গৃহপালিত বিরোধী দল সেখানে বসে আছে। সরকার বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে তাদের প্রয়োজনে, রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে। প্রশাসন, পুলিশ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করেছে।

সিলেটে বিএনপির সমাবেশে প্রশাসনের বাধা প্রদানের অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল (সোমবার) তারা হঠাৎ করে সমাবেশ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল কেন? কারণ কয়েকদিন আগে সিলেটে ছাত্রদল মিছিল করেছিল, তাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিল।

এতে তারা ভয় পেয়েছিল। সমাবেশে বিএনপি নেতারা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন এবং ইলিয়াস আলীসহ সব ‘গুম’ নেতাকর্মীর সন্ধান দাবি করেন।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রাতে মঞ্চ ভেঙে, ব্যানার খুলে নেয় পুলিশ। তারপরও বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন অনড় অবস্থানে। ফলে নানা শঙ্কা-আশঙ্কার মধ্যেও নেতাকর্মীরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন সকালে। তাছাড়া সকাল পর্যন্ত অনুমতিই ছিল না। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকারের সহযোগিতায় দেশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে ভয় পাওয়ার কারণে অন্যায়ভাবে জেলে আটক রেখেছে সরকার।

স্থায়ী কমিটির সদস্য বারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর সিভিলিয়ান ক্রুর মাধ্যমে এ সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনা চোরের দল দিয়ে সরকার গঠন করেছেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা, খন্দকার আবদুল মোক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলন, জিকে গউছ, আবদুর রাজ্জাক, সিলেট নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহারিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, কৃষক দল সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, হবিগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাসেম, মৌলভীবাজার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাহির চৌধুরী প্রমুখ। সমাবেশে স্থানীয় নেতারা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানান।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button