বিশেষ সুবিধার আওতায় বড় অঙ্কের পুনর্গঠিত ঋণ সীমিত আকারে পুনঃতফসিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, পর্ষদের এ সিদ্ধান্তের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। এর আলোকে বড় অঙ্কের পুনর্গঠিত ঋণ সীমিত আকারে পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নেয়া হবে।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক জামাল উদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ (তিনি সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন), বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের লাইসেন্সের বিষয়ে আলোচনাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সভাটি সাড়ে তিনটায় শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সভা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী পরিচালক ও জনতা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীদের আবেদনের ভিত্তিতে পুনর্গঠিত বড় অঙ্কের ঋণ সীমিত আকারে পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটা শুধু তারাই পাবেন, যাদের অতীত লেনদেন ভালো। আর যাদের অতীত লেনদেন ভালো নয় তারা এ সুবিধা পাবেন না।
জানা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে ২০১৫ সালে বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় ১১টি শিল্প গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়।
ব্যাংক সূত্রগুলো বলছে, সুবিধা পাওয়ার এক বছর পর ঋণ পরিশোধের সময় এলে বেশির ভাগ গ্রুপই নানা টালবাহানা শুরু করে। মাত্র দুটি গ্রুপের ঠিকভাবে ঋণ পরিশোধের প্রমাণ মেলে। বাকি গ্রুপগুলো আবার খেলাপি হয়ে পড়ে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. জামাল উদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি সরকার তাকে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ায় আগেই পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। সে পদত্যাগপত্র বোর্ড সভায় গৃহীত হয়।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকটিতে আরও দু’জন নতুন পরিচালকের বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি চাওয়া হয়।
বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশনের একটি পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করা হয়। এতে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন, ঋণ পুনঃতফসিল ও উচ্চ খেলাপি ঋণ আরও কমিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়।
মঙ্গলবারের বোর্ড সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী পাস করা হয়। এতে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাপক মুনাফা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া চলতি বছরের ১ জুলাই অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণী ও ১৭ জুলাই পরিচালক পর্ষদের নির্বাহী কমিটির ২১৯তম সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক মেজর ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস পর্যালোচনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রেরণা বোনাস হিসাবায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী সর্বোচ্চ পদোন্নতিপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালকের মধ্যে বিশেষ কয়েকটি পদের জন্য এক নং গ্রেডে বেতন কাঠামো উন্নীত করা, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ ব্যাংকের হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণের সময়সীমা আরও এক মাস পেছানো, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটে চুক্তি ভিত্তিতে চিফ সিকিউরিটি ইনফরমেশন অফিসার নিয়োগ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের শেয়ার সার্টিফিকেট ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ট্রেজারি পরিচালিত রিজার্ভ অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।