জাতীয়লিড নিউজ

ঢামেকের ২০ কোটি টাকা খাবার বিলের খবর মিথ্যা: হাসপাতাল পরিচালক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবারের বিল নিয়ে ওঠা বিতর্কের ব্যাখ্যা দিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলছেন, খবরটি পুরোপুরি মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, এক মাসে কোনো অবস্থাতেই খাবার বিল ২০ কোটি টাকা করা হয়নি। হাসপাতাল পরিচালক গত দুই মাসের ব্যয়ের হিসাবও ব্যাখ্যা করেছেন।

বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নাসির উদ্দিন বলেন, গত দুই মাসে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং আনসার সদস্যসহ মোট ৩,৬৮৮ জন। ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী তারা এক সপ্তাহ করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি করার পর পরবর্তী তিন সপ্তাহ আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। এ হিসাবে প্রত্যেককে ১ মাস করে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতে হয়।

খরচের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, গত দুই মাসে আবাসিক হোটেল ভাড়া, দৈনিক তিন বেলার খাবার এবং যাতায়াত ভাতাবাবদ সম্ভাব্য ব্যয় ২৬ কোটি টাকা হিসাব ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে চিকিৎসকদের ১ মাসের খাবার খরচবাবদ ২০ কোটি টাকা শীর্ষক প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা মে-জুন মাসের বাজেট ২০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম। অর্থ মন্ত্রণালয় সেই টাকা ছাড় করেছে। সেই টাকা নিয়ে কথা উঠছে।

পরিচালক বলেছেন, ২০ কোটি টাকার মধ্যে হোটেলে থাকা, খাওয়া ও যাওয়া আসার খরচও অন্তর্ভুক্ত।

তিনি বলেন,চিকিৱসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিআরটিসির চারটি দ্বিতল বাস ভাড়া করা হয়। এক মাসে বাস ভাড়া ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭০ টাকা।সেই হিসাবে দুই মাসে পরিবহন ব্যয় প্রায় ১ কোটি টাকা। হিসাব করে দেখা গেছে, পরিবহন ব্যয়, হোটেলে থাকা খাওয়া সহ দুই মাসে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এক মাসের ব্যয় হিসাব করে দুই মাসের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৱসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যয় নির্বাহের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এতে হোটেল ভাড়া ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, খাবার খরচ বাবদ সাড়ে ৫ কোটি,পরিবহন বাবদ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা এখনও কোনো হোটেল কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়নি।

হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহামারির এ দুর্যোগকালীন সময়ে জীবন ঝুকি নিয়ে করানো রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এরপরও এই ধরণের উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত সংবাদ আমাদের ব্যথিত করেছে।

নাসির উদ্দিন বলেন, একজন ভদ্রলোক একটা বক্তব্য দিলেন, সেটি নিয়ে সমগ্র দেশ বিভিন্ন রকম কমেন্টস করল, যা আমাদের দারুণভাবে হতবাক করেছে। একজন লোক একটা মিথ্যা বক্তব্য দিলে পুরো দেশের মানুষ তার পিছনে চলে যাবে?

তিনি জানান, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ওই অভিযোগ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা এর ব্যাখ্যা দেবেন।

‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সবকিছুর প্রমাণ দেবে। আমরা তো সরকারি কর্মকর্তা, আমাদের বিষয়ে তো নিশ্চয় সেই সিদ্ধান্ত হবে যদি আমরা সঠিকভাবে কাজ না করি। কিন্তু যিনি বা যে প্রতিষ্ঠান বা যে ব্যক্তি ওই মন্তব্য করে আমাদের সমগ্র চিকিৎসক সমাজ ও আমাদের এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে অপদস্ত করেছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী ‘চিকিৎসকদের এক মাসের খাবার খরচ ২০ কোটি টাকা’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় সম্প্রতি। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সোমবার জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীও প্রশ্ন তুলে বলেন, এক মাসে খাবার খরচ ২০ কোটি টাকা কী করে হয়? বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ২০ কোটি টাকা খরচের ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হলেন হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button