জাতীয়

দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরো ১১ জনের মৃত্যু

দেশে করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ নিয়ে আরো ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও দুই শিশু-কিশোর রয়েছে। এছাড়া দুই গৃহবধূ ও এক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ি ফেরেন। এ নিয়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৮৬ জনের মৃত্যু হলো। স্টাফ রিপোর্টার ও সংবাদদাতাদের খবর-
বরগুনা (উত্তর): বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম দেলোয়ার হোসেন(৭২) করোনার উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আমতলী সদর ইউনিয়নের লোচা গ্রামের নিজ বাড়িতে মারা যান। এ ঘটনায় বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ শুক্রবার বিকালে আমতলী উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন। এছাড়া তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের হোম কেয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী: নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদীতে বাড়ি ফেরা সুলতানা বেগম (৩০) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আলোকবালী পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে স্থানীয় চিকিত্সাকেন্দ্রে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তিনি ঐ গ্রামের আমানুল্লাহর স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, গত রাতে তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: জেলার আখাউড়া উপজেলার রাণীখার গ্রামে করোনার উপসর্গ নিয়ে শিপন বেগম (৫০) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। সম্প্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে অসুস্থতা নিয়ে নিজ বাড়ি রাণীখার গ্রামে চলে আসেন। তিনি ওই গ্রামের হামদু মিয়ার স্ত্রী। প্রতিবেশীরা জানান, সাত-আট দিন ধরে তার প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও কাশি ছিল। সামাজিক হেনস্তার আশঙ্কায় তিনি কাউকে কিছু বলেননি। ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা জানান, তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হবে। সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. একরামউল্লাহ জানান, মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে।
গাইবান্ধা: জেলার গোবিন্দগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে রিমা খাতুন (১১) নামে এক শিশু মারা গেছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের দক্ষিণ মিয়াপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে সে মারা যায়। ঐ বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। মৃত ঐ শিশু ঐ গ্রামের এনামুল হকের ছেলে।
রাখালবুরুজ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন জানান, রিমার বাবা-মা ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ঢাকায় কোনো কাজকর্ম না থাকায় গত ৫ এপ্রিল রিমার বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। তার পর থেকেই রিমা সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। রিমার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
ফেনী: ফেনীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে নুর নবী নামে এক ব্যক্তির (৬০) মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের শিবপুর এলাকার বাড়িতে মারা যান তিনি। ওই এলাকা লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা ভাইরাসের ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত নারায়ণগঞ্জ জেলায় একটি মাছের আড়তে কাজ করতেন নুর নবী। স্থানীয় ফাজিলপুর ইউপি সদস্য মাহমুদুন নবী বাবর জানান, ২৪ মার্চ নুর নবী ও তার ছেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। তার পর থেকে নুর নবী জ্বর ও গলাব্যথায় ভুগছিলেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। কিন্তু তার পরিবার ও স্বজনদের বাধার মুখে অ্যাম্বুলেন্স ফিরে আসে। তার পরও বৃহস্পতিবার তার দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
রাজশাহী: করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সোলাইমান কাজি (৫৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের সুনাপুর গ্রামে। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা, তা নিশ্চিত নন চিকিত্সকরা। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম: জেলার সাতকানিয়া উপজেলার মার্দাশা ইউনিয়নে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার রাতে তার মৃত্যু হয়। ছয়-সাত দিন যাবৎ সে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছিল বলে নিশ্চিত করেছেন এলাকাবাসী। মৃত কিশোরের নাম মোহাম্মদ সাকিব (১৭)।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল কবির বলেন, প্রতিবন্ধী সাকিব হার্টের রোগী ছিল। তার দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়া তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক ব্যক্তির নমুনাও সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে মেডিক্যাল টিম।
পাবনা: জেলার সাঁথিয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা তুজ জান্নাত জানান, করোনা সন্দেহে বুধবার ছুম্মা খাতুনের রক্ত সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। ধুলাউড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জরিফ মাস্টার জানান, ঐ মহিলা অ্যাজমা রোগী ছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঠাণ্ডা-কাশিতে ভুগছিলেন। সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম জামাল আহমেদ জানান, সতর্কতার জন্য ঐ বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।
গাজীপুর: জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার রশিদপুর গ্রামের হাজি মোহাম্মদ আলী (৭০) করোনার উপসর্গ নিয়ে বুধবার বিকালে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই দিন আগে হঠাৎ সে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। বুধবার বিকেলে গলায় ভাত আটকে সে মারা যায়।
কুড়িগ্রাম: জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী জুবাইদুল ইসলামের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। জন্মগত হার্টের সমস্যাসহ সম্প্রতি ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিয়েছিল বলে চিকিত্সক ও পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। রংপুর মেডিক্যালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় বুধবার তাকে ঢাকায় পাঠানো হলে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী জানান, বুধবার রাতে জ্বর ও বুকব্যথা নিয়ে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. মাঈনুদ্দিন বলেন, “৬ এপ্রিল জ্বর ও বুকব্যথা নিয়ে আমার চেম্বারে আসেন। তিনি এবং তার স্ত্রী জানান, তিন দিন ধরে তার জ্বর ও বুকব্যথা। তার করোনার উপসর্গ আছে কিনা, তা পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। বরং এটি ছিল তার ভাইরাসজনিত জ্বর। পরীক্ষা করে দেখা যায়, রক্তের প্লাটিলেট ৯৮ হাজারের নিচে। সে কারণে সন্দেহ করা হচ্ছে তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন।”
কুষ্টিয়া: জেলার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের পল্লিতে করোনা উপসর্গ নিয়ে জিয়ার উদ্দিন (৩০) নামে এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকালে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। মৃত শ্রমিকের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে জ্বর, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি স্থানীয়ভাবে চিকিত্সা নিচ্ছিলেন। স্বজনরা জানান, জিয়ার উদ্দিন হাঁপানীর রোগী ছিল। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে মৃতের বাড়িসহ প্রতিবেশীদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে বলে ইউএনও জানিয়েছেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button