জাতীয়

বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির সুপারিশ

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে পূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে এ উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সুপারিশপ্রাপ্ত হলো বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে বাংলাদেশের উত্তরণ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ জানিয়েছে সিডিপি।

এদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশের সুখবর জানাতে শনিবারই সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এলডিসি থেকে কোন দেশ বের হবে, সেই বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে জাতিসংঘের সিডিপি। এজন্য প্রতি তিন বছর পরপর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এ তিনটি সূচক দিয়ে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কিনা, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। এ স্বীকৃতির জন্য যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। সিডিপির পরপর দুই মূল্যায়নে এসব মান অর্জন করলেই এলডিসি থেকে বের হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। ২০১৮ সালের সিডিপির মূল্যায়নে তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছিল। এবার ২০২১ সালের মূল্যায়নেও তিনটি সূচকের তিনটিতেই মান অর্জন করেছে দেশ।

উন্নয়নশীল দেশ থেকে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার,  ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫ দশমিক ৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬-এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২-এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২।

সিডিপির বিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকাল ভোগ করতে পারে। করোনাভাইরাস মহামারীর বাস্তবতায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চাওয়া হয়। এখন উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ায় পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। ওই বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এর চূড়ান্ত স্বীকৃতি আসবে।

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রফতানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি পর্ব চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতির এ সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

ষাটের দশকে স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি আসে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উন্নয়নশীল ও উন্নত এ দুই শ্রেণীতে সব দেশকে ভাগ করে থাকে জাতিসংঘ। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যে দেশগুলো তুলনামূলক বেশি পিছিয়ে আছে, তাদের নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে জাতিসংঘ। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। বর্তমানে ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশ আছে। এ পর্যন্ত মালদ্বীপসহ মোট পাঁচটি দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে। ওই পাঁচটি দেশের মধ্যে বতসোয়ানা ও ইকোইটোরিয়াল গিনি শুধু মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করে এলডিসি থেকে বের হয়েছে। অন্য দুটি সূচকে কখনই নির্ধারিত মান অর্জন করতে পারেনি। আবার মালদ্বীপ, সামোয়া ও কেইপ ভার্দে—এ তিনটি দেশ অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে মান অর্জন করতে পারেনি।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) এলডিসি গ্রুপের ৩৬ দেশ একসঙ্গে হয়ে দাবি জানিয়েছে, যে দেশই এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েট করুক না কেন তাদের অতিরিক্ত ট্রানজিশন পিরিয়ড দিতে হবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে তিন বছর এলডিসির সুবিধা পাওয়া যায়, অন্য দেশে পাওয়া যায় না। ডব্লিউটিওর মাধ্যমে এলডিসি দেশগুলো বিভিন্ন দেশে ২৬ ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। এ ২৬ ধরনের সুবিধা যেন গ্র্যাজুয়েশনের পরও পৃথিবীর সব দেশ ১২ বছর পায়, সে দাবি জানিয়ে ডব্লিউটিওতে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button