আইন-আদালতজাতীয়দুর্যোগলিড নিউজ

‘মিন্নির শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে পেটানো হয়েছে’

বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে আটকের পর বেধরক মারধর করা হয়েছে। তার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে পেটানো হয়েছে। সেই ব্যথার যন্ত্রণায় মিন্নি এখনও কাতর। রোববার সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে আইনজীবী জেড আই খান পান্নার চেম্বারে তার সঙ্গে মিন্নিকে নিয়ে সাক্ষাৎ করেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এসময় তিনি এ অভিযোগ করেন।

মিন্নির শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে বাবা কিশোর বলেন, মিন্নি অসুস্থ। রিমান্ডের নামে পুলিশের নির্যাতনের ভয়াবহতায় মিন্নি নানা জটিলতায় ভুগছে। তার হাঁটু ও বুকে ব্যথা। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেব। কিশোর আরও বলেন, জেলখানায় ব্যথার ওষুধ (পেইন কিলার) খাওয়ার পর মিন্নির প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে।

মিন্নির কী ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হচ্ছে- জানতে চাইলে কিশোর বলেন, ওকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে পেটানো হয়েছে। মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। পুলিশ লাইনসে নির্যাতনের কথা তুলে ধরে কিশোর বলেন, পুলিশ লাইনসে ধরে নেয়ার পর মিন্নিকে বসতে দেয়া হয়নি। সেখানে যতক্ষণ মিন্নি ছিল ততক্ষণ তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

এরপর রিমান্ডের আগে দেড়-দুদিন তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তখন অজ্ঞান হয়ে দুই-তিনবার মিন্নি পড়ে যায়। তার ওপর বর্বর অত্যাচার করা হয়েছে। মাথায় পিস্তল ধরে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। ওর একান্ত চিকিৎসা প্রয়োজন, এজন্য আমাদের ঢাকায় আসা।

মিন্নির বাবা কিশোর আরও বলেন, পুলিশের নির্যাতনের কারণে মিন্নি রাতে এখনও ঘুমাতে পারে না। কিছুক্ষণ পরপর চিৎকার দিয়ে ওঠে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমও নেই। স্বাভাবিকভাবে কথাও বলে না। দিন দিন বিমর্ষ হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন মিন্নি শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওর কারণে আমরা কেউ ভালো নেই।

ঢাকার আসার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিশোর বলেন, আমাদের ঢাকায় আসার উদ্দেশ্য হল সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সঙ্গে দেখা করে তার আইনি পরামর্শ নেয়া। এর আগে শনিবার বিকালে মিন্নি ও তার বাবা বরগুনার আমতলী থেকে লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ওইদিন কিশোর বলেন, ঢাকায় তাকে চিকিৎসা করাব।

উল্লেখ্য, ২৬ জুন প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে জখম করা হয়। পরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। এর মধ্যে মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেফতার করা হয়।

১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকায় বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওই দিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। বিচারিক আদালতে জামিন নামঞ্জুর হলে হাইকোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।

২৯ আগস্ট হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। জামিনের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর ২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ দেন। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে ছাড়া পান মিন্নি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button