জাতীয়

সাত দিনে কি সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব

আগামী ১১ আগস্টের পর ১৮ বছরের বেশি বয়সি নাগরিকরা টিকা না নিয়ে চলাচল করলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনা করা হবে। রাস্তাঘাট, গাড়িঘোড়া, মোটরসাইকেল, সাইকেল, টেম্পো, বাস, ট্রেনে চলাচল করলে টিকা নেওয়া থাকতে হবে। দোকানপাট খুলতে হলেও নিতে হবে টিকা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবাইকে ১০ আগস্টের মধ্যে টিকা নিতে হবে। সাত দিনের মধ্যে সবাই কীভাবে টিকা পাবেন, এ বিষয়ে সুর্নিদিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা বলছেন, টিকা দিতে বাধ্য নয়, উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সবাইকে টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষকে সুবিধা অনুযায়ী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। টিকা নিতে বেঁধে দেওয়া সময় বাস্তবসম্মত নয়। মার্কেটে মার্কেটে মালিক সমিতির অফিসে টিকা কেন্দ্র করার প্রস্তাব দিয়েছে দোকান মালিক সমিতি। টার্মিনালে টিকা কেন্দ্র চান পরিবহন মালিকরা। তারা বলছেন, নিবন্ধন করেও টিকা দেওয়া যাচ্ছে না। এসএমএস পাওয়া যাচ্ছে না। সবাইকে টিকা পাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য টিকা সবার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে হবে।

সাত দিনে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিবন্ধন ছাড়াই টিকাদানের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় নিবন্ধন ছাড়া টিকাদানের সুযোগ এখনও দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। দেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগ হচ্ছে ১৮ ও তদূর্ধ্ব বয়সি। সে হিসাবে ১০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এক সপ্তাহে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দুই ডোজের ভ্যাকসিন নিয়েছে ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯২৫ জন। আর ৫০ লাখ মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে; যারা দ্বিতীয় ডোজ টিকার অপেক্ষায় রয়েছে। ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সরকারের নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে হাতে থাকা সাত দিনে ৯ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশে চলমান লকডাউনের সময়সীমা আরও পাঁচ দিন বাড়িয়ে ১০ অগাস্ট পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার পর ১১ অগাস্ট থেকে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস খুলবে। সীমিত পরিসরে যানবাহন চলবে। তবে টিকা না নিয়ে কেউ কাজে যোগ দিতে পারবেন না। তিনি বলেন, ১১ আগস্ট থেকে ১৮ বছরের ওপরের কোনো মানুষ ভ্যাকসিন ছাড়া মুভমেন্ট করলে সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, টিকা নিলে নিজের পাশাপাশি অন্যদের নিরাপদ রাখা সম্ভব। টিকা নিলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসে। এক সপ্তাহে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব, আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, বাধ্যতামূলক করে টিকা দেওয়া সম্ভব না। অনেক দেশই মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে না। টিকা দিলে ১শ ডলার প্রণোদনা অফার দিয়েও কিছু হচ্ছে না। তিনি বলেন, এজন্য টিকাদানে উদ্বুদ্ধ করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম খান বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের টিকা পাওয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

করোনা সুরক্ষায় টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক সরকারের একটি কৌশল বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, টিকা দিলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায় এটি বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকায় ৯০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকায় ৯৮ শতাংশ সুরক্ষা মিলবে। টিকা দিলেও করোনা হতে পারে। কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি কমে আসবে। ভাইরাস বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না। হাসপাতালে ভর্তি হবে না।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, দিনে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া সক্ষমতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকার এক সপ্তাহে ১ কোটি দিতে চাচ্ছে। খুব সহজেই টিকা দেওয়া সম্ভব। করোনা মোকাবিলায় সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, টিকা নিতে যাদের অনীহা তাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে। কেউ টিকা নিলে ঘর থেকে বের হবে না। অনেকেই গোঁয়ার্তুমি করে বলেন আমার করোনা হবে না। এক সপ্তাহে পরই দেখা যায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে কান্নাকাটি করছে তারা।

সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, সবাইকে টিকা দেওয়া হবে এটি সরকারের সাহসী পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, নিবন্ধন করেও টিকা দেওয়া যাচ্ছে না। টিকা দেওয়ার জন্য এসএমএস পাওয়া যাচ্ছে না। সবাইকে টিকার পাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য টার্মিনালগুলোতে টিকা কেন্দ্র করে চালক, হেলপারসহ সবাইকে টিকা দিতে হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button