রাজনীতিলিড নিউজ

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারাও এবার কঠোর

আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় থেকেও বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেয়েছেন জেলা ও মহানগরের নেতারা। এর আলোকে কিছু কিছু স্থানে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য স্থানীয় নেতাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তৃণমূলের কাউন্সিলে যাতে বিতর্কিত এবং অনুপ্রবেশকারীদের স্থান না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা একটি চিঠি গত শুক্রবার থেকে দলের জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে পাঠানো হয়। এতে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীরা যাতে কোনোভাবে দলে স্থান না পান—এই নির্দেশনা ছিল। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা বলা হয় চিঠিতে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে দলে আর থাকতে পারবে না বলেও কড়া বার্তা দেওয়া হয়। গতকাল একাধিক জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল রোববার বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুককে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন এক তরুণী। এ ঘটনায় দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।

বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রের চিঠি পৌঁছেছে তৃণমূলে।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস গতকাল সোমবার বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনা আছে বিতর্কিত, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত এবং অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা এ-সংক্রান্ত চিঠিও তাঁরা পেয়েছেন। এরপরই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার কারণে ওমর ফারুককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ধর্ষণের মামলা হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতো বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বিষয়টি কঠোরভাবে পালন করা হবে।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকও চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, তাঁরা এখনো কেন্দ্রীয় নির্দেশনার চিঠি পাননি। তবে ফোনে নির্দেশনার বিষয়টি জেনেছেন।

যাঁদের নামে বদনাম আছে, দলে তাঁদের স্থান হবে না বলে জানান খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদকের চিঠি এখনো হাতে না পেলেও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল। বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে তাঁরা খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, জেলা ও মহানগরের নেতারা এখন অধীনস্থ কমিটির কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আগে ধর্ষণ বা অনেক অভিযোগ আমলেই নিতেন না নেতারা। অনেক সময় বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পেতেন না। কিন্তু কেন্দ্রের চিঠি পেয়ে তৎপরতা বাড়ছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দলাদলির কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িরও আশঙ্কা থাকছে।

ক্যাসিনো, জুয়া, অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান এত দিন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে তা মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তর ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বিস্তৃত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে মন্ত্রী, সাংসদ ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও অভিযানের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওন ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ ২২ জনের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সাংসদ নজরুল ইসলাম ওরফে বাবু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, সিলেট মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিল চলছে। কোনো বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীকে সংগঠনের কোনো পদে স্থান দেওয়া হবে না।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button