ধর্ম

গির্জায় মুহাম্মদ (স.)-এর কার্টুন: এ কারণেই কি ‘অভিশপ্ত’ ইতালি?

র্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত যে দেশটি সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় আছে, সে দেশটি হচ্ছে ইতালি। মৃত্যুর মিছিল যেন কোনভাবেই থামাতে পারছে না ইতালীয় প্রশাসন। সর্বশেষ দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ।

খোদ ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কোঁতে মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা মহামারীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। শারীরিক ও মানসিকভাবে মারা গেছি আমরা। আর কী করতে হবে, জানি না। পৃথিবীর সব সমাধান শেষ হয়ে গেছে। এখন সমাধান শুধু আকাশে রয়েছে।’ এমন পরিস্থিতিতে উঠে এসেছে ইতালির আরেক ইতিহাস। অনেকে বলছেন, ওই ঘটনার কারণেই ইউরোপের এক ‘অভিশপ্ত দেশ’ ইতালি। সেই অভিশাপই দেশটিকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবে কী সেই ইতিহাস?

রেনেসাঁ যুগে ইতালির বিখ্যাত শিল্পীদের একজন Giovanni da Modena। ঠিক ৬১০ বছর আগে নবী মুহাম্মাদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন এই শিল্পী। পুরনো সেই ব্যঙ্গচিত্র আজও রক্ষিত আছে ইতালির শহর বোলোগনার একটি ক্যাথলিক গির্জায়। যে ব্যঙ্গচিত্রে দেখানো হয়েছে, মহানবী (স.)-কে নির্যাতন করছে দোজখের রক্ষীরা (নাউজুবিল্লাহ)। ওই গির্জার নাম San Petronio Basilica। ২০০১ সালে প্রথম ইতালির মুসলিমরা ব্যঙ্গচিত্রটি ধ্বংস করার দাবী তোলে। কিন্তু ইতালি সরকার সে দাবীকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো মুসলিমদের দমানোর জন্য ২০০২ সালে ৫ জন মুসলিমকে গ্রেপ্তার করে। সরকার দাবি করে, ওই গির্জায় হামলার পরিকল্পনা করছিলেন তারা।

ওই ঘটনার পরপরই মূলত ইউরোপে মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র নির্মাণের একটি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় রাষ্ট্র ডেনমার্কের জিল্যান পোস্টেনে মহানবী (স.)-এর ১২টি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে।এরপর ২০০৬ সালে নরওয়ে ওই কার্টুনগুলো তাদের দেশে পুনরায় প্রকাশ করে। পরে ১ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেন মিলে মুহাম্মাদ (স.)-এর কার্টুনগুলো আবার প্রকাশ করে। ৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের পত্রিকা শার্লি হেবদো প্রথম পাতায় বড় করে একই ধরনের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই সবগুলো দেশেই করোনা ভয়ংকর মহামারী হয়ে দেখা দিয়েছে। এক পর্যায়ে স্পেন অনেকটা নতি স্বীকার করে দেশটিতে উচ্চস্বরে আজান দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। এখন দেখা যাক, ইতালি কোন পথে এগোয়! এদিকে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এসে ইতালি সরকারের এক মন্ত্রী ঘোষণা করে, মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে টি-শার্ট বানিয়ে সবার মধ্যে বিলি করবে সে। এপ্রিল মাসে ইতালির ক্যাথলিক সট্যাডি (Studi Cattolici) নামের একটি খ্রিস্টান ধর্মীয় পত্রিকা ‘San Petronio Basilica’ গির্জায় সংরক্ষিত Giovanni da Modena ব্যঙ্গচিত্রের অনুকরণে নতুন কার্টুন প্রকাশ করে। এরপরই খুব দ্রুত এই কার্টুনের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৭ সাল থেকে ইসলাম ও মুহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ব্যাপক কাজ শুরু করে নেদারল্যান্ডসের এমপি গ্রিট উইল্ডার্স।

পরে এ নিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনী হয়। কয়েকটি ইসলামবিদ্বেষী চলচ্চিত্রও হয়। পুরো বিষয়টি তখন ইউরোপের দেশগুলোর জনগণের পৃষ্ঠপোষকতা পায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহাদেশজুড়ে অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। কারণ সেসব দেশে বেশিরভাগ অভিবাসীই ছিল মুসলিম। এসব ঘটনায় বাংলাদেশেও এক পর্যায়ে সেই ইউরোপের পরিকল্পিত ইসলামবিদ্বেষী কার্যক্রম শুরু হয়। উত্থান ঘটে ইসলামবিদ্বেষী বিভিন্ন ব্লগারের। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের দেয়া হয় পৃষ্ঠপোষকতা।আর এই কার্যক্রমের শীর্ষে আছে ইউরোপভিত্তিক সংস্থা ‘পেন ইন্টারন্যাশনাল’, যার প্রধান কার্যালয় ব্রিটেনে। কিছু বাংলাদেশি ছেলেকে তারা টাকা দিয়ে কিনে নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের দেয়া হয় ইউরোপ ভ্রমণের ভিসা। গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে মুহাম্মদ (স.), কুরআন এবং ইসলাম নিয়ে যে ব্যঙ্গচিত্র কার্যক্রম, তা কিন্তু শুরু হয়েছিলো ইতালির গির্জার সেই ব্যঙ্গচিত্র কেন্দ্র করেই। সম্প্রতি ইতালি নামক রাষ্ট্রটি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত হওয়ার পর এ নিয়ে নানা প্রশ্ন শুরু হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এত উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুর মিছিল ইতালিতে থামছে না। অনেকেই দাবি জানিয়েছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইতালির উচিত ব্যঙ্গচিত্রটি ধ্বংস করে ফেলা।

এছাড়া অতীতের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, ১৪১০ সালের যে সময়টায় ইতালিতে মুহাম্মদ (স.)-এ ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়েছিল, সে সময়ে ইতালিসহ পুরো ইউরোপজুড়ে চলছিল ভয়ংকর ব্ল্যাক প্লেগ। ১৪২০ সালের পরে গিয়ে থামে সেই মৃত্যুর মিছিল। এরপর প্রতি প্রায় ১০০ বছর পরপর মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছে বিশ্ব। যেমন ১৫ শতকের ১০ এর দশকে, ১৬ শতকেরও একই সময়ে এবং ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ শতকের এই সময়গুলোতে। এসব মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউরোপ। চলতি বছরের করোনা ভাইরাসও এর সাক্ষী।
সূত্র- এইদিন

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button