অর্থনীতি

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল গঠন

করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ‘পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ২০২০’ নামে একটি তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার এ ব্যাপারে এক গাইড লাইন তৈরি করে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে,  করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দেশের নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের আয় রোজগারের  কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন না।

এ স্কিমের নাম হবে ‘নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম- ২০২০’।  স্কিমের মেয়াদ হবে তিন বছর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হবে। তবে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, অর্থায়নকারী ব্যাংক হতে প্রত্যয়নপত্র প্রদানের অনুরোধ প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে এমআরএ  ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বিষয়ক প্রত্যয়নপত্র সরবরাহ করবে। এছাড়া অর্থায়নকারী ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন পরিশোধের সক্ষমতা, আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়ে এ স্কিমের আওতায় অর্থায়ন, ঋণ বিতরণ, তদারকি এবং আদায়ের বিষয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করবে।

এ স্কিমের আওতায় কোনও একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র একটি ব্যাংক হতে অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ‘অন্য কোনও ব্যাংক হতে এ স্কিমের আওতায় কোনও অর্থায়ন গ্রহণ করা হয়নি’ মর্মে অর্থায়নকারী ব্যাংকে একটি প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে।

‘নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী’ অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে কৃষি এবং বিভিন্ন আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত বিভিন্ন শ্রেণি/পেশার স্থানীয় উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, অতিদরিদ্র, দরিদ্র অথবা কোনও অনগ্রসর গোষ্ঠীভুক্ত ব্যক্তি এবং অসহায়/নিগৃহীত নারী সদস্যরা এ ঋণ/বিনিয়োগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা যাবে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব নীতিমালার পাশাপাশি গ্রাহকের বিগত এক বছরের আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণ করবে।

কেবল ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সমিতিভুক্ত কোনও সদস্যকেই এই ঋণ দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তারজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমন গ্রাহকরা অগ্রাধিকার পাবেন। তবে এ স্কিমের আওতায় গৃহীত ঋণের অর্থ দিয়ে গ্রাহকের বিদ্যমান অন্য কোনও ঋণ/বিনিয়োগ সমন্বয় করা যাবে না।

নিজ বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ স্কিমের আওতায় ঋণ দেওয়া যাবে না।

একক গ্রাহকের ক্ষেত্রে ঋণ/বিনিয়োগের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার হাজার টাকা এবং আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের  সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপভিত্তিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ সদস্যবিশিষ্ট গ্রুপের অনুকূলে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ/বিনিয়োগের আওতায় এককভাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা এবং যৌথ প্রকল্পের আওতায় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপভিত্তিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ সদস্যবিশিষ্ট গ্রুপের অনুকূলে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে ঋণের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। গ্রুপ গঠন এবং এর কার্যাদি পরিচালনার বিষয়ে সব সদস্যের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অর্থায়নকারী ব্যাংকের অনুকূলে প্রদত্ত পুনঃঅর্থায়নের বিপরীতে সুদ হার হবে বার্ষিক ১%। অর্থায়নকারী ব্যাংক কর্তৃক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদত্ত অর্থায়নের বিপরীতে সুদ হার হবে বার্ষিক ৩.৫%।

গ্রাহক পর্যায়ে বার্ষিক সুদ/মুনাফা/সার্ভিস চার্জের হার হবে সর্বোচ্চ ৯%; যা ক্রমহ্রাসমান স্থিতি পদ্ধতিতে হিসাবায়ন করতে হবে।

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে সাপ্তাহিক/মাসিক কিস্তিতে ঋণের অর্থ আদায় করবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button