হরিজন পল্লীর আলোকবর্তিকা
বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি চাকরীতে উপজাতি কোটার পাশাপাশি আরো একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠির কোটা নির্ধারিত থাকলেও প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের জন্য নেই শিক্ষার যথেষ্ট সুযোগ এবং পরিবেশ । বলছিলাম হরিজন পল্লীর বঞ্চিত শিশুদের কথা। যারা শিক্ষার আলো থেকে সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন। বাজার ঘাট, বাড়িঘরের ময়লা পরিস্কার করে যারা পরিবেশকে সুন্দর রেখে চলেছে তাদের সন্তানেরা শিক্ষার সৌন্দর্য্য থেকেই সম্পুর্ণ বঞ্চিত। ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার হরিজন পল্লীর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে এক মহতি উদ্যোগ নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গড়ে উঠা গ্রুপ “গৌরিপুর হেল্পলাইন” এর এডমিন এবং মডারেটর প্যানেলের সদস্যরা।
গৌরিপুর হেল্পলাইনের প্রধান এডমিন মুস্তাকিম আহমেদ জানান “সাধারন মানুষের সাহায্য সহযোগীতার মধ্য দিয়েই শুরু হয় এই গ্রুপের কার্যক্রম। প্রথমে উপজেলার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আমরা মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি।
তারপর আমরা এডমিন এবং মডারেটর প্যানেলকে সাথে নিয়ে ঈদে এবং পূজায় বস্ত্র বিতরণ, গরীর মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, মাদকমুক্ত সুশীল সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখি। আমাদের এডমিন এবং মডারেটর প্যানেলে প্রায় ৩০ জন সদস্য তাদের পড়ালেখা এবং চাকরীর পাশাপাশি নিয়মিত সময় দিয়ে সামাজিক কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। সমাজের বিভিন্ন তথ্য এবং অসঙ্গতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের নজরে আসে হরিজন পল্লীর সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের। যারা শিক্ষার আলো থেকে সম্পুর্ণ বঞ্চিত।
মানুষের ৫ টি মৌলিক অধিকারের শ্রেষ্টতম অধিকারটি থেকেই তারা বঞ্চিত। তাদের পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানতে পারি, স্থানীয় বিদ্যালয় গুলো তাদের শিক্ষা দিতে অনীহা পোষণ করে। সবাই তাদেরকে ছোট চোখে দেখে।
তখন আমাদের “গৌরীপুর হেল্পলাইন ” হরিজন পল্লীর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে শুরু করে একটি অস্থায়ী স্কুল । বাচ্চাদের দেয়া হয় পাঠ্য বই, খাতা, কলম এবং প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র। সপ্তাহ জুড়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি হলো কিভাবে বাচ্চাদের অগ্রসর করানো যায়।
প্রতিদিন স্কুল প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে জ্ঞান বিতরনে ব্যস্ত গৌরীপুর হেল্পলাইনের অস্থায়ী বিদ্যালয়টি। এখন বাচ্চারা আর পিছিয়ে নেই। এখন তারাও নিজেদের নাম ঠিকানা লিখতে পারে স্পষ্ট অক্ষরে। প্রতিদিন যেন বাচ্চারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে সেই জন্য আমাদের নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্কুল শেষে বাচ্চাদের জন্য কিছু নাস্তার ব্যবস্থা রাখি।
আমরা চাই ওরাও সাধারণ মানুষের মতোই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাক এবং নিজেরা সাবলম্বী হোক । তবে সরকারি বা বেসরকারি কোন সহযোগিতা পেলে আমাদের স্কুলিং কার্যক্রমটি আরো ভালো হতো। কারণ আমরা এখন মাছ বাজারের নির্ধারিত একটি উন্মুক্ত ঘরে ক্লাস পরিচালনা করে থাকি। ওদের জন্য নির্ধারিত কোন স্কুলঘর নেই। এই বিষয়ে গৌরিপুরের জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।”
গৌরিপুর হেল্পলাইনের এডমিন এবং মডারেটর প্যানেলের সকল সদস্য সর্বসময় গৌরিপুরের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রধান এডমিন মুস্তাকিম আহমেদ সহ কাজ করছেন আরিয়ান শুভ্র, নুরুল আমিন চৌধুরী, জয় বিশ্বাস, সেঁজুতি, পিংকি, জাকিরুল ইসলাম,মালবিকা, সাদিয়া, এবং প্রকৌশলী আলমগীর গৌরিপুরী সহ আরো অনেকেই। ইন্টারনেটের এই যুগে প্রত্যেকটা সমাজে এরকম সামাজিক গ্রুপগুলো হতে পারে সমাজের আলো।