রংপুর বিভাগসারাদেশ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রায় ১’শ একর জমির মালিকানা হারানোর আশংকায় দিশেহারা প্রায় ৫ হাজার পরিবার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাগভান্ডার থেকে বঙ্গসোনাহাট স্থল বন্দর গামী রাস্তার দু’পাশে প্রায় ৫ হাজার পরিবার শত শত বছর ধরে বৈধ মালিকানা নিয়ে বসবাস করে আসছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের প্রয়োজনে ভূমি রিকুউজিশন (অল্প সময়ের জন্য) করে একটি রাস্তা  নির্মান হয়। অল্প সময়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ায় রাস্তাটি ভূমি মালিকগণের নামে থেকে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্থানীয় কু-চক্রীমহলের প্ররোচনায় বগুড়া সেনানিবাস, নর্দান সার্কেল, ভূ-সম্পতি দপ্তর কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই চলমান রেকর্ড/ডিপি খতিয়ান সৃষ্টির লক্ষে স্থানীয় ভূমি প্রশাসনে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে প্রকৃত ভূমি মালিকগণ বিষয়টি অবগত হয়ে বগুড়া সেনানিবাস,নর্দান সার্কেল, সামরিক ভূ-সম্পতি দপ্তরের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন, মানব বন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি গ্রহন করেছে। স্বত্ব দখলীয় ভূমি মালিক কমিটির আহবায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ তাইফুর রহমান মুকুল জানান,দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় যুদ্ধের প্রয়োজনে বাগভান্ডার মৌজা থেকে সোনারহাট স্থলবন্দর বানুরকুঠি মৌজা পর্যন্ত ৫টি মৌজার উপর দিয়ে এই রাস্তা নির্মাণ হয়। অল্প সময়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ায় তৎকালীন সরকার রাস্তাটির জন্য জমি অধিগ্রহন করার প্রয়োজন না হওয়ায় অধিগ্রহন করেনি। ফলে যথা নিয়মে এস,এ রেকর্ড পূর্ব মালিকগণের নামে রেকর্ড হয়। জমির মালিকগণ সরকারী নিয়মে যথাযথ ভাবে নিজ নিজ নামে নামজারি করে খাজনা পরিশোধ পূর্বক ভোগ দখল করে আসছেন। পরবর্তী দীর্ঘ্য সময় সরকার কিংবা বগুড়া সেনানিবাস, নর্দান সার্কেল, ভূ-সম্পতি দপ্তর কোন প্রকার আপত্তি করেনি। বর্তমানে চলমান রেকর্ড পূর্ব দখলীয় মালিকগণের নামে রেকর্ড প্রস্তুত হলে বগুড়া সেনানিবাস, নর্দান সার্কেল, ভূ-সম্পতি শাখা তসদিক চলাকালে ভূমি মালিকগণের রেকর্ড কর্তনের জন্য ডিসপুট কেস দিলে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (তসদিক) ভূরম্নঙ্গামারী,কেসগুলির স্বপÿে বৈধ কাগজপত্র তলব করে না পেয়ে কেসগুলি না মঞ্জুর করেন। এবং পূর্বের মালিকানা বহাল রেখে ডিপি খতিয়ান প্রস্তুত করেন। এঅবস্থায় বগুড়া সেনা কর্তৃপক্ষ ডিপি খতিয়ান কর্তন করে তাদের নামে রেকর্ড করার জন্য আবারো ৫টি মৌজায় ৩০ধারা আপত্তি কেস করেন। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ৫টি মৌজার মধ্যে ৪৫নং গছিডাঙ্গা মৌজার অধিকাংশ কেস ও ৪৬নং পাইকেরছড়া মৌজার সমুদয় কেস নর্দান সার্কেল সেনানিবাসের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কেসগুলি না মঞ্জুর করেন এবং মালিকানা ডিপি খতিয়ান বহাল রাখেন। গত ২৫.০৯.২০২০ ইং তারিখে ২৩.০০০৩.০২১.০৫.১২৭.১৭-৯০ নং স্বারকে উপ-সচিব ভূ-সম্পতি প্রশাসক, নর্দান সার্কেল বগুড়া সেনানিবাস, মোঃ রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে উল্লেখিত মালিকানাধীন রেকর্ডভূক্ত বসতবাড়ী কৃষি জমিগুলো কর্তন পূর্বক তাহাদের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার জন্য অপতৎপরতা অব্যহত রেখেছেন। এ নিয়ে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার রংপুর, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ভূরম্নঙ্গামারী পড়েছে চরম বিপাকে। স্পর্শকাতর একটি বিভাগের চিঠি প্রাপ্ত হয়ে তাদের নামে কোন বৈধ কাগজপত্র ও দখল ছাড়াই মালিকানা রেকর্ড কর্তন করে তাদের নামে রেকর্ড করে দেয়ার কৌশলও খুঁজছেন বলেও জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সেটেলমেন্ট অফিসের একাধিক কর্মচারী জানান, দীর্ঘদিন থেকে ভোগ দখল, সি,এস ও এস,এ রেকর্ডধারী জমির মালিকগণ উল্লেখিত জমির প্রকৃত মালিক। তাদের রেকর্ড কর্তন করে বগুড়া সেনানিবাস, নর্দান সার্কেলে এ জমির রেকর্ড করে দেয়ার বৈধতা নেই। ইতিমধ্যে জনস্বার্থে শুধুমাত্র রাস্তাটি বাংলাদেশ সরকার পক্ষে  কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হয়েছে। ৩২নং বাগভান্ডার মৌজার ভুক্তভোগি শ্রী গবিন্দ চন্দ্র সাহা রাষ্ট্র পক্ষকে বিবাদী করে বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত কুড়িগ্রামে মামলা নং২৪/২০০৭ অন্য একটি মোকদ্দমা আনায়ন করলে পূর্বের সাজোনা ও সামরিক ভূ-সম্পতি নর্দান সার্কেলের উপ-সচিব স্বাক্ষরিত ২৫.০৯.২০২০ ইং তারিখে সেটেলমেন্ট অফিসে পাঠানো পত্রে উল্লেখিত ১১/৪২-৪৩ এল এ কেস এর স্বপক্ষে কোন প্রমানাদি না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ মোকোদ্দমায় হেরে যায়।
এঅবস্থায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ৫টি মৌজার প্রায় ৫ হাজার ভূক্তভোগী পরিবার বিষয়টি রাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সু-দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button