অর্থনীতি

অনলাইনে চাল ডাল মাছ মাংস কিনলেও ভ্যাট

অনলাইনে চাল, ডাল, মাছ, মাংসসহ অন্যান্য পণ্য কিনলে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। তবে এই ভ্যাট পণ্যের মোট মূল্যের উপর দিতে হবে না।অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো যে লাভে পণ্য বিক্রি করবে সেই লাভের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে ক্রেতাকে। অনলাইন কেনাকাটায় অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও এই একইভাবে ভ্যাট দিতে হবে ক্রেতাদের। পণ্যের মোট মূল্যের উপর ভ্যাট কাটা হবে না। সোমবার অনলাইনে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আদায়ের বিষয়ে এই দিক-নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন ক্রেতা অনলাইন থেকে ১০০ টাকার পণ্য কিনলে তাকে ৫ টাকা ভ্যাট দিতে হবে না। ভ্যাট দিতে হবে অনলাইন প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছে যে লাভে পণ্য বিক্রি করছে তার ৫ শতাংশ। অর্থাৎ কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনলাইন প্রতিষ্ঠান ৯০ টাকায় কোন পণ্য কিনে ১০ টাকা লাভে ১০০ টাকায় বিক্রি করলে ক্রেতাকে ওই লাভের ওপর ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ পয়সা ভ্যাট দিতে হবে। ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর সোমবার একটি এসআরও জারি করে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে এনবিআর।

এনবিআরের দিক-নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনলাইনে পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ ধরনের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন উৎস হতে করযোগ্য এবং কর অব্যাহতি প্রাপ্ত উভয় ধরনের পণ্য সংগ্রহ করে নিজেরা মূলত একটি বিক্রয় মাধ্যম হিসেবে কাজ করে গ্রাহকদের পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা এ সব পণ্যের চূড়ান্ত ভোক্তা। এ সেবা প্রদানের বিনিময়ে অনলাইনে পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত পণ্যের মূল সরবরাহকারী/ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হতে কমিশন, ফি, সার্ভিস চার্জ, রেভিনিউ শেয়ারিং বা অন্যবিধভাবে সেবামূল্য গ্রহণ করে থাকে। ‘মূল্য সংযোজন কর একটি ভোক্তা কর বিধায় এ করের চূড়ান্ত দায়ভার ভোক্তার উপরই বর্তায়।

ফলে, অনলাইনে পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূল উৎপাদনকারী/ সরবরাহকারী হতে করযোগ্য পণ্য ভ্যাট ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক পরিশোধপূর্বক সংগ্রহ করে উক্ত পণ্য একই মূল্যে চূড়ান্ত ভোক্তার নিকট সরবরাহ করলে পুনরায় সম্পূর্ণ পণ্য মূল্যের উপর মূসক পরিশোধ করতে হবে না। কেননা, এক্ষেত্রে দ্বৈত-কর আরোপিত হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে কর পরিশাধের প্রমাণ হিসেবে মূসক চালানপত্র/ ট্রেজারি চালানের কপি অনাইনে পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকতে হবে। এ পণ্য গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহের বিপরীতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রদত্ত সেবার বিপরীতে যে সেবামূল্য প্রাপ্ত হয়ে থাকে সে সেবামূল্যের বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়যোগ্য হবে। এ সব প্রতিষ্ঠান প্রথম তফসিলভুক্ত মূসক অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য, যেমন- শাক-সবজি, মাছ, চাল, ডাল, মাংস ইত্যাদি গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো সেবামূল্য প্রাপ্ত হলে সেক্ষেত্রেও উক্ত সেবামূল্যের বিপরীতে ৫ শতাংশ মূসক প্রযোজ্য হবে। কেননা সরবরাহকৃত পণ্যসমূহ প্রথম তফসিল দ্বারা অব্যাহতি হলেও ‘অনলাইনে পণ্য বিক্রয়’ সেবা অব্যাহতিপ্রাপ্ত নয় এবং এ ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান অনলাইন সেবা সরবরাহ করছে। সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় অনলাইনে পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো করযোগ্য কিংবা কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত যে কোনো ধরণের পণ্যই সরবরাহ করুক না কেন, প্রাপ্ত সেবামূল্যের বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে মূসক প্রযোজ্য হবে।

তবে শর্ত থাকে যে, অনলাইনে পণ্য বিক্রয়কারী কর্তৃক সংগৃহীত পণ্য/ সেবার বিপরীতে সরবরাহ গ্রহণ পর্যায়ে প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করা না হলে উক্ত পণ্য/সেবার বিপরীতে ক্রেতা বা ভোক্তা কর্তৃক প্রদত্ত পণ্য বা মূল্যের (পণ্য/সেবার মূল্য এবং অনলাইন সার্ভিসচার্জ সহ) উপর সংশ্লিষ্ট পণ্য/সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হারে ভ্যাট আদায়যোগ্য হবে।’

১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনলাইনে কেনাকাটায় সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশনের (ই-ক্যাব) দাবির পরিপেক্ষিতে পরে ৩০ জুন অর্থবিল পাশের সময় তা কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, বাজেটে ৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে তা নিরসণের জন্য এনবিআরের সঙ্গে কাজ করেছে বেসিস। তার ফলশ্রুতিতেই এই সম্মানজনক সমাধান এসেছে।

ই-ক্যাবের সভাপতি রেজওয়ানুল হক জামি বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি ছিল পণ্যের মোট মূল্যের উপর নয়। আমাদের লাভের ওপর ক্রেতাদের ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত এনবিআর আমাদের কথা রেখেছে। আমরা খুশি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button