অর্থনীতি

ই-জিপি সিস্টেমের ফল: সাত বছরে সাশ্রয় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা

বাংলাদেশে সরকারি কেনাকাটায় ই-জিপি (ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) সিস্টেম চালু হওয়ায় সাত বছরে ৬০ কোটি ডলার বা চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কাগজ, কলম ও যাতায়াত খরচ, অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থের অপচয় না হওয়ায় এবং প্রকল্পে যথাযথ অর্থ ব্যয় হওয়ায় এ সাশ্রয় হয়েছে। এতে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের সময়ও কমেছে। বিশ্বব্যাংকের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাসেসমেন্ট অব বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম’ শীর্ষক ন্যাশনাল কনসালটেশন ওয়ার্কশপে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। এ ওয়ার্কশপের আয়োজন করে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ও বিশ্বব্যাংক।

ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মারসি মিয়াং টেমবন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজার ইলমাস এরিসয়। সিপিটিইউর মহাপরিচালক মো. আলী নূরের সভাপতিত্বে ওয়ার্কশপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান প্রকিউরমেন্ট কনসালটেন্ট পিটার আরমিন ট্রেপটি ও জ্যেষ্ঠ প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট ইশতিয়াক সিদ্দিক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ই-জিপি সিস্টেমে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের সময় কমেছে। ২০১১ সালে ওপেন টেন্ডার মেথডে (ওটিএম) সময় লাগত ৯৪ দিন আর ২০১৯ সালে এসে ই-জিপি সিস্টেমে সময় লাগছে ৫৯ দিন। তবে ৭০ শতাংশ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়াকে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে বলা হয়, ২০১১ সালে দেশে ই-জিপি সিস্টেম চালু হওয়ার পর দরপত্র প্রক্রিয়ার পরিবেশ উন্নত হয়েছে।

সরকারি কেনাকাটায় ২০০৭ সালে দক্ষতা ছিল ১০ শতাংশ, সেটি ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ৯০ শতাংশ। স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে বলা হয়, ২০০৭ সালে ১৫ শতাংশ টেন্ডারার্স অ্যাওয়ার্ড পাবলিকেশন হতো। আর এখন শতভাগ পাবলিকেশন হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। আগে গড়ে চারজন দরদাতা দরপত্র দাখিল করত আর এখন গড়ে ১৬ জন দরদাতা অংশগ্রহণ করছেন। অন্যসব সূচকেও অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, যখন শুনি ৭০ ভাগ প্রকল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি তখন আমরা ব্যথা পাই। এটা আমাদের জন্য ভয়ংকর অগ্রহণযোগ্য বিষয়। তিনি বলেন, আমরা প্রফেশনাল নই, রাজনীতি করি। আমরা বরাদ্দ দিই, প্রকল্প অনুমোদন দিই। যারা কাজ করেন, তাদের গাড়ির প্রয়োজন, বসার প্রয়োজন, সেটা জনগণের অর্থ দিয়ে আমরা করে দিই। কিন্তু যখন কাজ পাই না, তখন ব্যথা পাই। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজে কেউ লুকোচুরি করবেন না। আবুল মনসুর ফয়জুল্লাহ বলেন, এডিপির আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশ প্রকল্প উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না।

এর মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হওয়া একটি অন্যতম কারণ। তবে ই-জিপি সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে সরকারি কেনাকাটায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। মারসি মিয়াং টেমবন বলেন, দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ই-জিপি সিস্টেমেও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। এলমাস এরিসয় বলেন, ই-জিপির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের জন্য রোল মডেল।

আধুনিক প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম হওয়ায় দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে। জনগণের অর্থের সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা গেছে। অন্য দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আলী নূর বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ই-জিপি সিস্টেম সফল হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button