অর্থনীতি

এজেন্ট ব্যাংকিং: ঋণ ২৩৭ কোটি টাকা

যেখানে ব্যাংকের সেবা পৌঁছেনি সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব বেড়েই চলেছে। গত জুন শেষে এ ব্যবস্থায় হিসাব সংখ্যা ৩৪ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গ্রামের সাধারণ মানুষের হিসাব সবচেয়ে বেশি।

অর্থাৎ প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে-খাওয়া মানুষের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ। এসব হিসাবের মাধ্যমে ৫ হাজার কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২৩৭ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের শাখাগুলো আড়ম্বরপূর্ণ সাজসজ্জায় বেষ্টিত। এতে বেশি ব্যয়ের আশঙ্কায় গ্রামের অনেক মানুষ এক সময় ব্যাংকে যেতে ভয় পেতেন।

ব্যাংকে সঞ্চয় না করে সমিতি বা অপ্রাতিষ্ঠানিক নানা জায়গায় টাকা রাখতেন। এখন তাদের একটি অংশ নিজ এলাকার পরিচিতজনের সম্পৃক্ততায় পরিচালিত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে সঞ্চয় করছেন। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় টাকা পাঠাচ্ছেন। নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা আসছে বিদেশ থেকে। ভয় না থাকায় দ্রুত প্রসার হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৭২টি। এর মধ্যে গ্রামে ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৮টি এবং শহরে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৪টি হিসাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন ২১টি ব্যাংক পেলেও কার্যক্রমে আছে ১৯টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ৬ হাজার ১৩ এজেন্টের আওতায় ৮ হাজার ৬৭১টি আউটলেট রয়েছে। এজেন্ট ও আউটলেট বিস্তৃতিতে শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া।

ব্যাংকটির ২ হাজার ৮৭৭টি এজেন্টের আওতায় বর্তমানে ২ হাজার ৯৬০টি আউটলেট রয়েছে। তবে হিসাব সংখ্যার বিবেচনায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শীর্ষে। যার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খোলা হিসাব সর্বমোট হিসাবের ৪৫ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংকটির ৭৪১টি এজেন্টের আওতায় আউটলেট রয়েছে ২ হাজার ৯৫৩টি। হিসাব খোলা সংখ্যার ভিত্তিতে ব্যাংক এশিয়া দ্বিতীয় এবং ইসলামী ব্যাংক তৃতীয় স্থানে রয়েছে। উল্লিখিত তিন ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে মোট হিসাবের ৮০ শতাংশেরও বেশি হিসাব খোলা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে ৫ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। একইভাবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৭ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ২৩৭ কোটি টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্প্রতি ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রভাব মূল্যায়ন করেছে। এতে দেখা গেছে, হিসাবধারীদের ৫৩ শতাংশ নানাভাবে সঞ্চয় করছে।

তাদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ সঞ্চয়কারী আগে অপ্রাতিষ্ঠানিক বা আধা-অপ্রাতিষ্ঠানিক প্র্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় করতেন। আর আগে কখনও সঞ্চয় করতেন না- এমন রয়েছেন ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরফান আলী বলেন, ব্যাংকের সাজসজ্জা দেখে গ্রামের মানুষ কেমন খরচ হবে তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন।

এছাড়া স্ট্যাটাসের একটা ব্যাপার আছে। গ্রামের খেটে-খাওয়া মানুষ সংকোচ বোধ করতেন যে তারা কীভাবে কোট-টাই পরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। এসব কারণে অনেক সময় হয়তো তারা ব্যাংকে যেতে চাইতেন না। এক জরিপে দেখা গেছে, শুধু উচ্চ সাজসজ্জা না থাকার কারণে ২০ শতাংশ মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button