অর্থনীতি

করোনার ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম কমেছে

করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী অনেক পণ্যের দাম কমে গেছে। ২০২০ সাল জুড়েই এই কম দাম অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি ‘এপ্রিল কমোডিটি মার্কেট আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক কার্যক্রম হঠাৎ থমকে যাওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জ্বালানি ও ধাতবপণ্যের বাজার। সেই সঙ্গে একটি আসন্ন মন্দা এখন প্রত্যাশিত। জ্বালানি তেলসহ পরিবহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর দাম সবচেয়ে কমেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে কৃষিপণ্যে মাঝারি ধরণের প্রভাবের পূর্বাভাস দিলেও সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ও আমদানি নির্ভর হওয়ায় অনেক দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পরতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইকুইটেবল গ্রোথ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সেয়লা পেইজিবাসিওগলু বলেন, মানুষের মৃত্যু ছাড়াও, মহামারীটির অর্থনৈতিক প্রভাব চাহিদা কমিয়ে দেবে ও সরবরাহ বাধাগ্রস্থ করবে।উন্নয়নশীল দেশের নিত্য পণ্যের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, ‘নীতিনির্ধারকেরা মহামারী কারণে নেওয়া সহায়তামূলক ব্যয়ের জন্য জ্বালানি-ভর্তুকি সংস্কারের মাধ্যমে তেলের কম দামের সুবিধা নিতে পারেন।এর মাধ্যমে সবচেয়ে দূর্বল অংশগুলোকে সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা জাল দিয়ে পরিপূরক করা দরকার। নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এমন ব্যবস্থা আরোপের আহ্বানকে প্রতিহত করতে হবে। কারণ দরিদ্ররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেক কমেছে। এপ্রিলে তেলের দামে এতিহাসিক পতন হয়। প্রথমবারের মতো মার্কন বাজারে তেলের দাম ঋণাত্নক হয়। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, চলতি বছর অপরিশোধিত তেলের দাম গড়ে ৩৫ ডলার থাকতে পারে। গতবছরের অক্টোবরের প্রতিবেদনে তা ৬১ ডলার থাকবে বলে পূর্বাভাস দেয় সংস্থাটি। অর্থাত প্রত্যাশিত দাম ৪৩ শতাংশ কমিয়েছে সংস্থাটি। আর এর মূল কারণ চাহিদার ব্যাপক ধস। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশসমূহের সংস্থা ওপেক ও অন্য তেল উতপাদনকারীদের মধ্যে উতপাদন সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তেলের দাম আরও কমিয়ে দিয়েছে।

সামগ্রিকভাবে জ্বালানির দাম (এরমধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা অন্তর্ভুক্ত) ২০২০ সালে গড়ে ৪০ শতাংশ কমবে। তবে ২০২১ সালে আবার বড় আকারেই ঘুরে দাঁড়াবে।

প্রতিবেদনে বলা হয় ২০২০ সালের শুরুতে ধাতব পণ্যের দাম কমতে থাকে। সবচেয়ে বেশি কমেছে তামা ও দস্তার দাম যা প্রধানত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর নির্ভরশীল। ২০২০ সাল জুড়ে ধাতব পণ্যের দাম ১৩ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চাহিদা কমার পাশাপাশি অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এটি হবে। পরিবহণ খরচ কমে আসায় কৃষিপণ্যের দাম কম হবে। তবে বাণিজ্য বাধা থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংকের ইনফ্রাস্টাকচার বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাখতার দায়প বলেন, ‘পণ্য বাজারে ও তেলের স্বল্প দামের বিরাট ধাক্কা উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি ও মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগকে বিপদে ফেলতে পারে।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button