ব্রাজিলকে ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানোর আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির
ব্রাজিল সরকারের কাছে চলমান ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে বা শুল্কমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, উচ্চহারে আমদানি শুল্ক থাকার কারণে বাংলাদেশ আশানুরূপ তৈরি পোশাক ব্রাজিলে রপ্তানি করতে পাচ্ছে না। শুল্ক কমানো হলে ব্রাজিলের মানুষ কম মূল্যের বিশ্বমানের বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ক্রয় করতে পারবেন। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বাংলাদেশ বিশ্বমানের তৈরি পোশাক উন্নত বিশ্বে রপ্তানি করছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত ২০ আগস্ট দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট মার্কোসার (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ের সমন্বয়ে গঠিত বাণিজ্যিক জোট) সফরের প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় দিন ব্রাজিলের বৃহত্তম ব্যবসায়ী সংগঠন সাও পাওলো চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন।
ব্রাজিলের আমদানিকারকদের সহযোগিতা কামনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান আমদানি শুল্কহার কমাতে ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদেরও প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ব্রাজিল সরকারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে এ আমদানি শুল্কহার কমানো সম্ভব। বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো, বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট মার্কোসার (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ের সমন্বয়ে গঠিত) বাণিজ্য জোটের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
টিপু মুনশি সাও পাওলোর প্রাদেশিক ফেডারেশন অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্রাজিলের বস্ত্র ও পোশাক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রণোদনা, বিশাল বাজার ও বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সফর করতে এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
এছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী ব্রাজিলের বিনিয়োগকারীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ব্রাজিলের বিনিয়োগকারীদের একটি ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দিতে প্রস্তুত।
ব্রাজিলের বৃহত্তম ব্যবসায়ী সংগঠন সাও পাওলো চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা বিষয়ে একটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। বিজিএমই’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সম্ভাবনা ও সাফল্য বিষয়ে অপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করা হয়। এসময় বাংলাদেশ থেকে অধিক পরিমাণে তৈরি পোশাক আমদানির জন্য ব্রাজিলের আমদানিকারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এসময় বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বিজিএমইএ এবং সাও পাওলো চেম্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিজিএমইএ এবং ব্রাজিলের বস্ত্র ও পোশাক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৭-৮ নভেম্বর সাও পাওলোতে বিজিএমইএ’র উদ্যোগে ব্রাজিলে বাংলাদেশের বাণিজ্যমেলা আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। মেলায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ ব্রাজিলে রপ্তানি সম্ভাবনাময় ওষুধ, পাট, সিরামিক, প্লাস্টিক প্রভৃতি পণ্য প্রদর্শণ করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী সফররত ১৫ সদস্যের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক, বিকেএমইএ’র প্রতিনিধি, ঔষধ শিল্পের প্রতিনিধি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের ব্যবসায়ী নেতারা প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।