বিনোদন

শিক্ষার প্রসারে সমাজে প্রভাব ফেলতে চান তোরসা

‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৯’-এর চ্যাম্পিয়ন রাফাহ নানজীবা তোরসার মাথায় বিজয়ীর মুকুট ওঠার পর সবকিছুতে তার দায়িত্ববোধ যে বেড়েছে, এটা তিনি ভালোভাবেই অনুভব করছেন। সুন্দরী প্রতিযোগিতার শীর্ষস্থানে এসে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে সেখানে অনেক বড় দায়িত্ববোধ কাজ করে, আর সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না বলে মনে করছেন এই নবীন তারকা।

সোমবার দুপুরে গুলশানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সঙ্গে আলাপকালে তোরসা বললেন: ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ শুধু সুন্দরী প্রতিযোগিতা নয়। এখানে সুন্দরের চেয়ে মেধাকে মূল্যয়ন করা হয়। মানুষের বাইরের সুন্দরের মতো ভিতরটাও কতটুকু সুন্দর তা বিচার করা হয়। সেজন্য কখনও কারো সুন্দর মুখ দেখে সবকিছু বিচার করতে নেই।

তিনি বলেন: এই প্রতিযোগিতায় আমার ‘বিউটি উইথ দ্য পারপাস’ হচ্ছে শিক্ষা। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কিভাবে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারবো এবং বিশ্ব মানচিত্রে কিভাবে তুলে ধরতে পারবো সে দিকেই মনোযোগ দেব। এছাড়া দেশের বাইরে অংশ নেয়ার আগে আমার ভুল এবং কম পারদর্শী বিষয়গুলো ভালো করে শিখে নিতে চাই। সবকিছুর মধ্যে আমি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে সমাজে প্রভাব ফেলতে চাই। আমার কাজগুলো দেখে সমাজের মানুষ প্রভাবিত হন সেদিকে খেয়াল করবো।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তোরসা বলেন: ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ একটি আন্তর্জাতিক চ্যারিটি। এই চ্যারিটিটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি টেনেছে। কারণ, আমি নিজে ১১ বছর বয়স থেকে চ্যারিটি করছি। চট্টগ্রামের লিও চ্যারিটি ক্লাবের সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি সমাজ সেবার সঙ্গে জড়িত। এই পারপাস থেকেই আমার ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। শুরু থেকে একটি দেশকে ফোকাস করার জন্য যতটুকু যোগ্যতা থাকা দরকার সেদিকটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আমি খুব ইতিবাচক মানসিকতার একজন মানুষ। সবকিছুর মধ্যে ভালোটা খুঁজি। সবার কাছে আমি ভালো কামনা চাই। দেশের জন্য কিছু করতে চাই। এজন্য দেশের মানুষের সাপোর্ট ও দোয়া আমার খুব প্রয়োজন।

‘মিস ওয়ার্ল্ডে’ অংশ নিতে হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ফলোয়ার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে জানান তোরসা। তিনি বলেন: ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ কর্তৃপক্ষ মাল্টিমিডিয়ার উপর গুরুত্ব দেন। তারা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম চেক করেন, কত মানুষ ফলো করছেন। এছাড়া বিশ্ব প্রতিযোগিতার জন্য ‘মবস্টার’ নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে সেখানে আমার বিভিন্ন কার্যক্রম ফলো করার জন্য দেশের মানুষকে অনুরোধ জানাচ্ছি। নিজের দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে এতোটুকু সামাজিক সাপোর্ট খুব দরকার। এর পাশাপাশি ভূয়া ফেসবুক পেজ ও আইডি এড়িয়ে যাওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।

আগে দু’জন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ (জেসিয়া ইসলাম, ঐশী) শোবিজে ক্যারিয়ার গড়ছেন। ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে কোন মাধ্যমে কাজ করতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে তোরসা বলেন: ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ থেকে ফিরে আমি লেখাপড়া শেষ করবো। মিডিয়াতে কাজের ইচ্ছে একেবারে নেই তা কিন্তু না। কাজ করবো। তবে অবশ্যই এমন কাজ করবো যেন আমার ওই কাজগুলো সমাজে কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলে এবং আমার কাজগুলো খুব প্রমিনেন্ট হতে হবে। তবে আমার মধ্যে কোনো তাড়াহুড়ো নেই।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তোরসা নৃত্য, আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, থিয়েটার, মডেলিং, মূকাভিনয়েও পারদর্শী। তিনি আবৃত্তি সংগঠন ‘নরেন’ এবং থিয়েটার সংগঠন ‘ফেইম’ এর সাথে যুক্ত। এছাড়া নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন সামাজিক সংগঠন লিও ক্লাব এবং রেড ক্রিসেন্টের সদস্য হিসেবে। বিজয় টিভির শো’র সঞ্চালনাও করেছেন, পাশাপাশি রেডিওতে কাজ করেছেন।

লেখাপড়াতেও মেধাবী তোরসা। চট্টগ্রাম ক্যান্ট. পাব্লিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ‘জিপিএ ফাইভ’ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন তোরসা। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন।

এবার ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ আয়োজন করেছে অমিকন এন্টারটেন্টমেন্ট। সহযোগী আয়োজক ছিল এক্সপার্ট প্রোভাইডার। তারা ৩৭ হাজারের বেশী প্রতিযোগী থেকে বিভিন্ন ধাপ ও যাচাই বাছাইয়ের পর সেরা নির্বাচিত করেন চট্টগ্রামের মেয়ে তোরসাকে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর লন্ডনে মিস ওয়ার্ল্ড মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে লাল সবুজের প্রতিনিধি হচ্ছেন ২১ বছর বয়সী এই সুন্দরী।

১১ অক্টোবর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠানের পর আজ (সোমবার) গুলশানে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ তোরসা ছাড়াও সেরা ১২’তে যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে খেতাব পেয়েছেন তাদের নিয়ে আয়োজিত হয় এক সংবাদ সম্মেলন।

সেখানে আয়োজকরা জানান: সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে ভিসা পাওয়া সহজ। কিন্তু অন্যান্য দেশগুলোতে যেতে হলে ভিসা পাওয়া কঠিন। লন্ডনে যাওয়ার জন্য তোরসার সকল কাগজপত্রের জন্য আবেদন পাঠানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগির গ্রিন সিগন্যাল আসবে। যদি ভিসা জটিলটায় তোরসা আটকে যান তবে তার পরিবর্তে এই প্রতিযোগিতার ‘ফেস অব বিউটি’ খেতাব প্রাপ্ত নওশীন মীম যেন সেখানে যেতে পারে সেই চেষ্টাও করা হবে।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান অমিকন এন্টারটেন্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন: অন্যবারের চেয়ে এবার প্রতিযোগী অনেক শক্তিশালী। আমরা তোরসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। সে নিশ্চয়ই বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে। তবে আমরা চাই, অন্তত মিস ওয়ার্ল্ডের ফাইনালে সেরা দশে বাংলাদেশ থাকুক।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button