অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ওভারডোজ : কী করবেন জেনে নিন
মানসিক সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য চিকিৎসকেরা অনেক সময় রোগীকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ সেবন করলে আক্রান্ত ব্যক্তি শারীরিক কোনো সমস্যা বোধ করেন না। তবে যদি ওষুধের ওভারডোজ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে বমিভাব, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। কী করে বুঝবেন আপনি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ওভারডোজে আক্রান্ত হয়েছেন কি না? চলুন, জেনে নেওয়া যাক এর লক্ষণ ও প্রতিকারগুলো-
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ওভারডোজ কি সম্ভব?
হ্যাঁ, সম্ভব। একজন ব্যক্তিকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট প্রদান করা হয় যখন তিনি মানসিক কোনো সমস্যা ভুগে থাকেন। হতাশা ও উদ্বিগ্নতা থেকে দূরে রাখতে এমন ওষুধ প্রদান করা হয়। সেক্ষেত্রে, মানসিকভাবে ভালো নেই এমন একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে ফেলতেই পারেন। এছাড়া, অ্যালকোহলের সাথে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি দেখা দিতে পারে। মোট পাঁচ ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট রয়েছে। সেগুলো হলো-
– সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিউপ্টেক ইনহিবিটরস (এসএসআরআই)
– সেরোটোনিন-নোরেপাইনফ্রিন রিউপ্টেক ইনহিবিটরস (এসএনআরআই)
– ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট
– মোনোঅ্যামাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটরস
– আটিপিকাল অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট আমাদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকবে তা নির্ধারণ করে। এর ওপরে ভিত্তি করে আমাদের মস্তিষ্ক সেরোটনিন, ডোপামিন এবং নোরেপাইনফ্রিন উৎপন্ন করে, যা কি না আমাদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকবে তা নির্ধারণ করে দেয়।
ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার কারণে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট নিতে হয় বিধায় এদের কোনোটি আমাদের জন্য কাজ করে, কোনোটি করে না। কোনো ব্যক্তির জন্য কোন ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কার্যকরী সেটা জানতে বেশ কিছুদিন সময়ের প্রয়োজন পড়ে। তবে যে ওষুধই হোক না কেন, সেটা অতিরিক্ত পরিমাণে না নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
অনেকগুলো অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করলে সেটা আমাদের শরীরে বাজে প্রভাব ফেলে। ওভারডোজের কারণে জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে টিসিএ ওভারডোজ সবচাইতে বেশি প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় উঠে আসে যে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সংখ্যা অনেক বেশি।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওভারডোজের লক্ষণগুলো কী?
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে নেতিবাচক সব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে শরীরে। সে সময় যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে সেটা আমাদের শরীরের জন্য বড় রকম ক্ষতির কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে ওভারডোজের ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে-
ব্যক্তি পরিমাণে কতটা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করেছেন
কোন ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করেছেন এবং
কোনো অ্যালকোহলের সাথে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করেছেন কি না
ওভারডোজের ফলে ব্যক্তির মধ্যে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে-
গা গোলানো
বমি
চোখে ঝাপসা দেখা
মাথাব্যথা করা
কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে পারা
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
জ্বর
মাথা ঘোরা ইত্যাদি
ওভারডোজের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয়-
হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
শরীরে কাঁপুনি দেওয়া
ভুল দেখা
রক্তচাপ কমে যাওয়া
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং
কোমা পর্যন্ত হতে পারে
যদি খুব বেশি ঘামতে থাকেন, চোখের গতি বেড়ে যায় এবং ওপরের লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। অন্যথায় এতে করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওভারডোজের চিকিৎসা কী?
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওভারডোজ হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা হিসেবে-
– রোগীকে বমি করানোর চেষ্টা করুন
– চারকোল অ্যাক্টিভেশনের মাধ্যমে ওষুধ শরীরের সাথে মানিয়ে নেওয়ানোর চেষ্টা করুন
এবং
– বেনজোডিয়াজেপিনেসের মাধ্যমে শারীরিক অস্বস্তি দূর করানোর চেষ্টা করুন
চিকিৎসক এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবেন।
কতটা ওষুধ সেবন করলে একজন ব্যক্তির অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওভারডোজ হবে সেটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপরে নির্ভর করে। তবে, চেষ্টা করুন চিকিৎসক যতটা ওষুধ সেবনের জন্য দিয়েছেন তার চাইতে বেশি ওষুধ সেবন না করার।
আর যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ গ্রহণ করলেও উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দেয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে ওষুধ পাল্টে নিন। এতে করে ওভারডোজ ও এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সহজেই বাঁচতে পারবেন আপনি।