স্বাস্থ্য

গ্যাস্ট্রিক হলেই ওষুধ, বিপদ ডেকে আনছেন অজান্তেই

কারও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে তার যেকোনো খাবার খেলেই এই গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। দিনভর কাজের চাপে বা ঠিকমতো খাবার না খেলেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। পেটে গ্যাস হওয়া হজম প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। এটা ছাড়া ঠিকমতো হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তখনই হয় যখন এই গ্যাস অতিরিক্ত হারে তৈরি হতে থাকে এবং সময় মতো বের হতে পারে না।

বিজ্ঞানীদের মতে, কঠিন পরিশ্রম করা, ওজন কম থাকা ও স্ট্রেস কম থাকার কারণে গ্রামের মানুষের অম্বল বা গ্যাস্ট্রিক শহরের মানুষদের তুলনায় কম হয়।

এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে পিপিআই অর্থাৎ ওমিপ্রাজোল গোত্রের ওষুধ খেয়ে থাকেন অনেকে। কেননা, পেটের অ্যাসিড দমিয়ে রাখতে এরা খুবই কার্যকরী। সকালে উঠে একটি খেয়ে নিলেই ব্যস! যত অনিয়মই হোক না কেন, তারপর সারাদিন আর কষ্ট নেই। এই ওষুধ অ্যাসিড বেরনোর পথ আটকে দেয় বলে রিফ্লাক্স ও আলসারের চিকিৎসায় এর ব্যবহারও রয়েছে।

আমরা গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় দ্রুত সমাধান খুঁজি। ফলে এই জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার শুরু হয়েছে। যার মাশুল দিতে হয় আমাদেরই।

চিকিৎসকরা আশঙ্কা করে বলছেন, শরীরে এটার প্রভাবে নানা ক্ষতি হতে পারে।

আপনিও এই সমস্ত অপব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন কি?

চলুন দেখে নেয়া যাক, সেই অপব্যবহার সম্পর্কে-

১. ব্যথার ওষুধে গ্যাস বা অম্বল হলেও ভরা পেটে দু-চার দিন খেলে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু ব্যথার ওষুধের সঙ্গে পিপিআই খাওয়া নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে সবার। গ্যাস-অম্বলের প্রবণতা না থাকলে এই পিপিআই অপ্রয়োজনীয়।

২. হঠাৎ অম্বলে সবচেয়ে ভালো ওষুধ লিকুইড অ্যান্টাসিড। কিন্তু মানুষ পিপিআই খান। সে যতক্ষণে কাজ শুরু করে ততক্ষণে পানি খেলে অ্যাসিড এমনিই সেরে যায়।

৩. অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে এই ওষুধ খেতে লাগে না। তবু চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই আমরা কিনে থাকি ও বাড়তি সতর্কতায় খেয়েও ফেলি। কখনো কখনো চিকিৎসকরাও রোগীকে মানসিক আরাম দিতে এই ওষুধ দিয়ে রাখেন প্রেশক্রিপশনে।

৪. গ্যাস–বদহজমের সঙ্গে অম্বল না থাকলে এর দরকার নেই। তবুও এই ওষুধটি খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে।

৫. রিফ্লাক্স বা আলসার কমাতে ৬–৮ সপ্তাহ পিপিআই খাওয়ার নিয়ম। কিন্তু শুরু করার পর অনেকেই বছরের পর বছর খেয়ে যান। কখনো আবার জীবনভর খান।

৬. মদ্যপান, স্ট্রেস ও জীবনযাপনের অনিয়ম ইত্যাদি কারণে অনেকের অম্বল লেগেই থাকে। আর তারা মূল সমস্যার সমাধান না করে পিপিআই খেয়ে যান এবং এর কুফল শুরু হয়।

৭. অনেকের ভিটামিন বি১২, অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার ঘাটতি হয়।

৮. বর্তমান সময়ে কম বয়সে ডিমেনসিয়া বা চিন্তাভাবনার অসঙ্গতির খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

৯. ব্যথা–যন্ত্রণা, হাড় ভাঙা ও অস্টিওপোরোসিসের প্রকোপ বাড়ে।

১০. এটা নিয়মিত খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে ক্ষতিকর জীবাণুর পরিমাণ বাড়ে। প্রায়ই ডায়েরিয়া হয়। শয্যাশায়ী বয়স্ক মানুষের নিউমোনিয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় বহুগুণে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button