স্বাস্থ্য

চোখ শুষ্ক হলে কি করবেন ?

চোখ আমাদের শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল অঙ্গ। এই চোখের কিছু হলেই আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। চোখকে তাই খুব সাবধানে রাখি। চোখের ভেতর একটা বালুর কণা গেলেও যেন চোখের খুব সমস্যা হয়। আবার মাঝেমধ্যে আমাদের চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, অস্বস্তি লাগে। কখনো জ্বালাও করে। কারণন চোখের পানি যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয়ে চোখকে আর্দ্র রাখতে পারলে এমনই সমস্যা হয়।

যেসব কারণে হয় এ সমস্যা :
অনেকক্ষণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বা বিমানের ভেতর থাকলে, হেলমেট বা সানগ্লাস ছাড়া মোটরসাইকেল চালালে বা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করলে এমন হতে পারে।

চোখের পানি তৈরি করে যে গ্রন্থি, তাতে সমস্যা হলেও চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে, নারীদের মেনোপোজের পর, ভিটামিন এ-এর অভাবে, ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের সমস্যায়, কোনো কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হলে গ্রন্থির অকার্যকারিতা দেখা দিতে পারে।

কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়াতেও হতে পারে এটি। চিকিৎসা করার পাশাপাশি শুষ্ক চোখের চিকিৎসায় কৃত্রিম চোখের পানি বা আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ব্যবহার করা হয়।

গ্রন্থির মুখ আটকে গেলে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। শুষ্কতা রোধ করতে কিছু বিষয় মেনে চলুন। টেবিল ফ্যান বা এসির বাতাস, হেয়ার ড্রায়ার, হিটার ইত্যাদি সরাসরি চোখের দিকে তাক করে রাখবেন না।

যেভাবে বুঝবেন শুষ্কতা রোগে ভুগছেন:
শুষ্ক চোখে সাধারণত সহজে পানি বের হয় না। সবসময় চোখ চুলকায়, অসস্তি লাগে বা ব্যথা করে।

দুই চোখে খচখচে, ব্যথাযুক্ত এবং শুষ্ক ভাব।সবসময় মনে হওয়া চোখের ভিতর কিছু আছে।চোখ লাল হয়ে যাওয়া।আলোর প্রতি সংবেদনশীল হওয়া।চোখে সবসময় ক্লান্ত ও অবসন্ন ভাব।

ঝাপসা দৃষ্টি।

চোখের শুষ্কতার পিছনে একাধিক কারণ কাজ করে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ

বয়স হওয়ার কারনে।
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়।
রোগের কারণে।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণে।

চোখের কোনও সমস্যার কারণে হচ্ছে কিনা এটা চিহ্নিত করতে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। সেই সাথে শুষ্ক চোখের চিকিৎসায় কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিও অনুসরণ করে দেখতে পারেন।

চোখের ব্যায়াম:
১। একটি সুতির কাপড় ভাঁজ করে কিছুটা গরম করে দুই চোখের উপর ধরে রাখুন পাঁচ মিনিটের জন্য। এতে করে চক্ষু গ্রন্থিতে কোনও ময়লা জমে থাকলে তা দূর হয়ে যাবে।

২। চোখের পাতা দুটি হাল্কা করে পরিস্কার করে নিন। এজন্য কুসুম গরম পানিতে সামান্য বেবি শ্যাম্পু মিশিয়ে আলতো করে দুই চোখের পাতা পরিষ্কার করে নিন। এবার বেশী করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লক্ষ্য রাখবেন, সাবান মিশানো পানি যেন চোখের ভিতর না ঢুকে।

৩। ঘন ঘন ও জোরে জোরে চোখের পাতা ফেলুন। এতে করে আপনার চোখের তরল পদার্থ গুলো বেশী করে নিঃসৃত হবে এবং কর্নিয়াকে ভিজিয়ে রাখবে। বিশেষ করে যখন টেলিভিশন দেখেন, পড়াশোনা করেন অথবা কম্পিঊটারে কাজ করেন তখন এই কাজটি নিয়মিত করুন।

৪। সূর্যের আলো থেকে চোখকে বাঁচাতে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। সরাসরি সূর্যের সংস্পর্শ চোখের শুষ্কতার কারন বা সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে।

যদি পরিবেশের কারণে চোখের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে, কিছুদিন ওই পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন। অনেকেরই ধুঁয়া, ধুলাবালি ইত্যাদির কারণে চোখের শুষ্কতা হতে পারে। তাই এই ধরণের পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন। ধূমপানের কারণে চোখের শুষ্কতা হলে ধূমপান ছেড়ে দিন, এবং ধূমপায়ীদের সরাসরি সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। প্রবল বাতাসের সময়ও চোখ শুষ্ক হতে পারে। তাই বাতাস প্রবাহের সময় ঘরে অবস্থান করুন।

ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খান:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব খাবারে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ফ্যাটি এসিড আছে, সেগুলো চোখের শুষ্কতা দূর করতে সহায়তা করে। এজন্য অমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট বা এই ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করতে পারেন।

১। তিসি গুড়া বা তিসির তেল।

২। পাম তেল।

৩। সয়াবিন তেল।

৪। তিল অথবা তিলের তেল।

৫। তেল সমৃদ্ধ মাছ, রুই মাছ, টুনা মাছ, তলোয়ার মাছ ও করাত মাছ।

৬। আখরোট বাদাম।

৭। ডিম।

এসব খাবারে প্রচুর পরিমানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আছে। এসব খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমও চোখের সুস্থতা ও শুষ্ক চোখ ভালো করতে সহায়ক। তাই পুষ্টিকর খাবার এবং চোখের যত্নের পাশাপাশি আট ঘণ্টা ঘুমানোও প্রয়োজন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button