বিদ্রোহী দলগুলোর সংঘর্ষে অশান্ত মিয়ানমারের কারেন প্রদেশও
মিয়ানমারের রাখাইন, শান ও কাচিন রাজ্যের পর এবার অশান্ত হয়ে উঠেছে দেশটির কারেন প্রদেশও। থাইল্যান্ড সীমান্তঘেঁষা রাজ্যটির দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী মন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (এমএনএলএ) সদস্যরা ডেমোক্র্যাটিক কারেন বুদ্ধিস্ট আর্মির (ডিকেবিএ) বেসক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে।
গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর দুই দফায় হামলা চালিয়ে তারা ডিকেবিএ’র সদস্যদের ধরে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ডিকেবিএ’র নেতা কর্নেল সো সান অং সোমবার মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীকে জানিয়েছেন, এমএনএলএ’র সদস্যরা আমাদের ক্যাম্পে হামলা করে কয়েকজন সদস্যকে ধরে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের কাছ থেকে আমাদের ঘাঁটি সরিয়ে নিতে বলেছিল। এটা করার জন্য তারা ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা এত অল্প সময়ের মধ্যে ক্যাম্প অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে পারিনি। এরপরই তারা হামলা করে।
তিনি বলেন, এমএনএলএ’র সদস্যরা আমাদের অনেক অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্যকেও আটক করে নিয়ে গেছে।
ডিকেবিএ’র সদস্যদের সঙ্গে দুই দফায় সংঘর্ষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এমএনএলএ’র ক্যাপ্টেন নাই আহ কর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমএনএলএ’র এক সদস্য জানান, হামলা চালিয়ে তারা ডিকেবিএ’র সাত সদস্যকে আটক করে নিয়ে এসেছে। এসময় তারা ১১টি অস্ত্র লুট করেছে।
মূলত কারেন প্রদেশের মায়িঙ গাই এনগু এলাকায় ডিকেবিএ বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে ২০১৬ সালে মিয়ানমার আর্মি ও কারেন বর্ডার গার্ড ফোর্সের যৌথ হামলায় তারা এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারায়।
এই হামলার পর থেকে দলটির কিছু সদস্য শান প্রদেশে চলে যায়। আর বাকিরা কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ) নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আত্মগোপন করে।
বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীটি উত্তর-পূর্ব মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠনগুলির জোটের সঙ্গেও যুক্ত। যদিও এটি এখনও ওই জোটের পূর্ণাঙ্গ সদস্য নয়।
এদিকে ডিকেবিএ মুন ও কারেন প্রদেশে নতুন সদস্য সংগ্রহে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। ডিকেবিএ গোষ্ঠীর সদস্যদের ধরতে পার্শ্ববর্তী মুন প্রদেশ সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে।
মুন প্রদেশ সরকার জানিয়েছে, ডিকেবিএ’র উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিকভাবে লাভের জন্য অস্থিতিশীলতা অবস্থা সৃষ্টি এবং শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করা।
এর আগে শান ও কাচিন প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন বহু সেনা। নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালায় প্রদেশটিতে বসবাস করা সাধারণ মানুষ।
মিয়ানমার সরকার এই সংগঠনগুলোকে ‘জঙ্গিগোষ্ঠী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
২০১৬ সালে নির্বাচনে বড় জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসেন অং সান সু চি। সেসময় তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আদিবাসী সংখ্যালঘু গেরিলা দল, সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে সু চি সরকার ওই প্রতিশ্রুতি পূরণের কোনো উদ্যোগই নেয়নি।