আন্তর্জাতিক

ভায়া বাংলাদেশ! ‘দাগি’ নাইজিরীয়রা চোরা পথে ফিরে আসছে নয়া অপরাধের ছক নিয়ে

এত দিন ওরা আসত বৈধ ভিসা নিয়ে। নাইজিরিয়া বা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে যাঁরা এ দেশে আসেন, তাঁদেরই একটা বড় অংশ জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজকর্মে। কিন্তু এখন আর বৈধ ভিসার পরোয়াও করছে না তারা। বাংলাদেশ হয়ে, দালালদের হাত ধরে, চোরা পথে সীমান্ত পেরোচ্ছে। এ দেশে ঢুকে ‘দেশোয়ালি ভাই’-দের সৌজন্যে দিল্লি, পুণে, মুম্বই বা কলকাতার মতো বড় শহরে খুঁজে নিচ্ছে নতুন ডেরা। অথচ পুলিশের কাছে তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্য থাকছে না।

নাইজিরিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এ ভাবে চোরা পথে আসার প্রবণতা গত কয়েক মাস ধরে নজরে আসছে পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের।

রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘শুধু এ মাসের ১২ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত মেঘালয় থেকেই গ্রেফতার হয়েছে ১৭ জন নাইজিরীয় নাগরিক। এরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকেছে। কারও কাছেই বৈধ নথি নেই।”

শুধু উত্তর-পূর্ব ভারত নয়। এ রাজ্যের সীমান্ত দিয়েও দালালদের হাত ধরে আফ্রিকার নাগরিকরা যে চোরা পথে এ দেশে ঢুকছে, তার খবরও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

মেঘালয়ের ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলার পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ সিংহ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাতাছেড়া আউট পোস্টে বিভিন্ন নাইট সুপার বাসে তল্লাশি চালানোকালীন এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অনেকের কাছে পাসপোর্টও নেই।” পুলিশ এবং গোয়েন্দারা ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছেন, ধৃতদের অনেকেই এর আগে ভারতে থেকে গিয়েছে। অপরাধমূলক কাজের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সানি নামে ধৃতদের একজন পুলিশকে জানিয়েছে, সে এর আগে গোয়াতে ছিল। সেখানে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।

ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে— এরা ভিসার আবেদন করলেও তা বাতিল হয়েছে। এর পরই তারা বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে ঢাকায় পৌঁছয়। সেখান থেকে দালাল ধরে ৫০০-৭০০ মার্কিন ডলার ‘চার্জ’ দিয়ে ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং বরাক উপত্যকার বিভিন্ন সীমান্ত পায়ে হেঁটে পেরিয়ে ঢুকেছে এ দেশে।

গত ২০ অগস্ট, কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা পাঁচ জন বাংলাদেশি দালালকে পাকড়াও করে, যারা পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বিনা নথিতে লোকজন পারাপার করায়। তাদের সূত্র ধরেই ১২ সেপ্টেম্বর ওই চক্রের আরও তিন জন ভারতীয় সদস্যকে গ্রেফতার করেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, ধৃতরা মূলত বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার করিয়ে এ দেশে নিয়ে আসত। তবে তাদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, সম্প্রতি অন্য একটি চক্র কয়েক জন আফ্রিকানকেও একই ভাবে সীমান্ত পার করিয়েছে। দালালদের কাছে আফ্রিকানদের কদর অনেক বেশি, কারণ বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গাদের তিনগুণ টাকা তারা পায় আফ্রিকানদের কাছ থেকে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিক এই নতুন প্রবণতাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘যারা এ ভাবে ঢুকছে তারা অধিকাংশই আগে এ দেশে অপরাধ করে গিয়েছে। ফের তারা ঢুকছে কিন্তু সরকারের কাছে তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্য থাকছে না। ফলে ফের তারা এখানে অপরাধ করবে এবং তাদের খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হবে।”

গোটা দেশের অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী— ভারতে মাদক চালান, বিক্রি এবং অনলাইন প্রতারণার যা ঘটনা ঘটে, তার ৩০ শতাংশের সঙ্গে যোগ থাকে আফ্রিকান নাগরিকদের।  এ বছর জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কমনওয়েলথ হিউমান রাইটস ইনিশিয়েটিভ একটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে— ভারতের বিভিন্ন কারাগারে এই মুহূর্তে বন্দি বিদেশিদের তালিকায় শীর্ষে বাংলাদেশ। ওই দেশের ২৫৪২ জন বন্দি আছে এখানে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নাইজিরিয়া। সে দেশের ২৪৩ জন বন্দি। আফ্রিকার সব দেশ মেলালে সেই সংখ্যা ৪১৫। ২০১৫ সালে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি নাইজিরিয়র সংখ্যাই ছাড়িয়ে গিয়েছিল ১১০০। পরবর্তীতে, নাইজিরিয় সরকারের অনুরোধে অনেককেই ফেরত পাঠানো হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, ফিরে যাওয়া সেই সব ‘দাগিরাই’ ফের চোরা পথে ফিরে আসছে নতুন স্যাঙাত জুটিয়ে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button