বরিশাল বিভাগলিড নিউজসারাদেশ

আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে আলো পৌছে দিতে পেরেছি

-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি:  আজ ২১ শে মার্চ। মার্চ মাস আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের মাস। অনেক ত্যাগের মধ্যদিয়ে অর্জনের মাস। এই মাসের ০৭ তারিখ বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষনে বলেছিলেন সাত কোটি মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। ১৯২০ সালে এই মাসের ১৭ তারিখ জাতির পিতা জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তার জন্ম না হলে হয়ত আমরা স্বাধীনতা পেতামনা। এই মার্চ মাসের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন। সেই থেকে স্বাধীনতা আমাদের। আজকে স্বাধীনতার সূবর্ন জয়ন্তী এবং মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে পেরেছি। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে নির্মিত দেশের বৃহৎ ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে সারা বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যেন উন্নত হয় সেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন সারা দেশের প্রতিটি ঘরে যেন আলো জলতে পারে। একটা রাষ্ট্রের উন্নতীর জন্য বিদ্যুৎ যে কতটা গুরুত্বপূর্ন সেটা তিনি সবসময় উপলব্ধী করেছিলেন। তাছাড়া ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে পানি ও বিদ্যু প্রকৌশলী সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া কোন কাজ হয়না, কিন্তু দেশের শতকরা ১৫ শতাংশ শহরের অদিবাসি বিদ্যুতের সুবিধা পেলেও, গ্রামে বসবাস করা শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষই বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত। তাই গ্রামে বিদ্যু পৌছাইতে হইবে। ইহার ফলে গ্রাম উন্নত হইবে। বন্যা নিয়ন্ত্রন আর গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করিতে পারিলে কয়েক বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে আর খাদ্য আমদানী করিতে হইবেনা। তিনি বলেন, বিদেশী সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এই দেশকে আপনি কিভাবে উন্নতী করবেন। তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার মাটি আছে মানুষ আছে, এই মাটি ও মানুষ দিয়েই আমি এদেশকে উন্নত করবো। বঙ্গবন্ধু পল্লী বিদ্যুতায়নকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। সামান্য কিছু লোক বিদ্যুৎ পায়। গ্রামেতো বিদ্যুৎ নাইই। আমরা উদ্দ্যোগ নিলাম, শুধু সরকারী না বে-সরকারী খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌছাবো। আমরা ক্ষমতায় আসার পর যেখানে মাত্র ১৫’শ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম সেখান থেকে মাত্র পাচঁ বছরে ৪৩০০ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলাম। দূর্ভাগ্য ২০০১ সালে যারা ক্ষমতায় আসলো তারা আবার বিদ্যুৎকে পিঁছিয়ে দিলো।

এসময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেখি ৪৩০০ থেকে নেমে ৩২০০ তে এসেছে বিদ্যুৎ। মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু বাংলাদেশ সব সময় পিছিয়ে যাচ্ছিলো। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একটানা গনতান্ত্রিক পদ্ধতি অব্যহত রয়েছে। এই ধারা অব্যহত রাখতে পেরেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। মানুষের কাছে ওয়াদা করেছিলাম প্রতি মানুষের ঘর আলোকিত করবো। আমরা আজ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। আজকের দিনটা আমরা যে আলোর পথে যাত্রা করেছি সেই সফলতার দিন।

বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব নজরুল হামিদ এমপি’র সভাপতিত্বে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ও চায়না পাওয়ার প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ এম খোরশেদ আলম। বিশেষ অথিতির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জি মিং, বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের সচিব জনাব হাবিবুর রহমান, প্রধান মন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী। এসময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সিনিয়র সচিব বৃন্দ, প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসে পৌঁছালে বিদ্যুৎ প্লান্টের পাশের আন্ধারমানিক নদীর রাবনাবাদ মোহনায় সু-সজ্জিত ২২০ টি নৌকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়। সু-সজ্জিত সেই নৌকার প্রদশর্নী প্রধানমন্ত্রী উপভোগ করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমর্পোট অ্যান্ড এক্সর্পোট করপোরশন’র (সিএমসি) মধ্যে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে কয়লা ভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের ভিত্তি প্রস্থর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক হাজার একর জমির উপর নির্মিত পরিবেশবান্ধব এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে ২.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। প্রতিদিন এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজন হবে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। নির্মান কাজ শুরুর পর থেকে নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরও ২০২০ সালের ১৫ মে প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে দিতে সক্ষম হয় (বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড) বিসিপিসিএল। পরে ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। কিন্তু গোপালগঞ্জ সাবষ্টেশনের ধারন ক্ষমতা কম থাকায় এবং গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এখন পর্যন্ত সরবারহ করতে পারছেনা এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। তবে এ বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে পুরো ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করতে সক্ষম হবে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩ তম দেশ। এশিয়ায় সপ্তম ও দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button