লিড নিউজ

এত দিন প্রবাসীরা আমাদের দিয়েছেন এখন আমরা দেব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এত দিন প্রবাসীরা আমাদের দিয়েছেন, এখন আমরা তাঁদের দেব। করোনার কারণে যাঁরা দেশে ফিরে এসেছেন তাঁরা যেন সম্মানজনক কোনো পেশায় যুক্ত হতে পারেন। কিংবা আরো উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও বিদেশে ফিরে যেতে পারেন।’

গতকাল বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ ছাড়া নারীদের প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা প্রকল্প না নিয়ে রাজস্ব খাতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠক-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, রাস্তা নির্মাণ ও সম্প্রসারণে ওভারপাস, আন্ডারপাস ও ইউলুপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, রাস্তার কারণে যাতে যান ও মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সড়ক ও জনপ্রশাসন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে ব্রিজ বানাতে উচ্চতা ঠিক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশ জোয়ার-ভাটার দেশ। তাই ব্রিজের উচ্চতা সঠিকভাবে রাখতে হবে। যাতে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।’ এ ছাড়া যেখানে-সেখানে বালুমহাল না করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈধভাবে ব্যবস্থা করা হলেও যেখানে-সেখানে বালুমহাল করা যাবে না। এ ছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে দুধ প্রক্রিয়াকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। ভেষজ ওষুধের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ভুল পরিকল্পনার কারণে বুড়িগঙ্গা নদীতে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু (বসিলা সেতু নামে পরিচিত) ভেঙে ফেলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কারণ ওই সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সম্প্রতি বিদেশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁদের অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁদের জন্য যেন শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়। দেশে ফেরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং মৃত কর্মীদের পরিবারকে পুনরেকত্রীকরণ বা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় তাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে একটি প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে করোনার কারণে বিদেশফেরত প্রায় দুই লাখ কর্মীকে ওরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিং করা হবে। এরপর প্রত্যেক কর্মীকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে দেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

এ ছাড়া করোনার কারণে বিদেশ প্রত্যাগত বিভিন্ন কাজে দক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ কর্মীকে বাছাই করে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ জোগাড় এবং তাঁদের দেশে-বিদেশে চাকরি পেতে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক। পর্যায়ক্রমে এ প্রকল্পের ব্যাপ্তি বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দুই হাজার ১৫০ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে তিনটি আন্ডারপাস এবং পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে ইউলুপ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং অ্যান্ড বায়োম্যাটেরিয়াল রিসার্চের সেবা ও গবেষণা সুবিধাদি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭২ কোটি ৯ লাখ টাকা।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৪৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হবে ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button