সারাদেশ

শখের কবুতরে স্বাবলম্বী কবির মিস্ত্রি

শখের বসে কবুতর কিনেছেন বছর দু’এক আগে। শখ করে মাত্র ৮শ টাকায় একজোড়া কবুতর নিয়ে লালন পালন করে এখন সফল একজন কবুতর খামারি বাঁশখালী উপজেলার শিলকুপের মো. কবির মিস্ত্রী।

পায়রা বা কবুতর শান্তির প্রতীক এই পাখিটি তার ভালো লাগার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে রীতিমতো। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই দেখা যায় এই পাখিটি। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের মানুষ কবুতর পালন করেন আদিকাল থেকেই। কেউ কবুতর পালন করেন শখের বশে আবার কেউ কবিরের মতো আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য।

কবির পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কোনো পড়ালেখার সুযোগ হয়নি তার। শখ করে কবুতর পোষে বর্তমানে তার বাড়ির আঙ্গিনায় ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের ছোট্ট একটি খামার গড়ে তোলেন। তিনি এখন স্বপ্ন দেখেন সেখানে একটি পাখীর খামার গড়ে তোলার। আশায় বুক বাঁধেন বড় একটি খামার হবে তার।

২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়। প্রথমে এক জোড়া কবুতর কিনেছি। দেশীয় জাতের জোড়া কবুতর ৮শ টাকায় নিয়ে শখের কবুতর পোষা শুরু হলো। সুন্দর ওই জোড়া কবুতর গুলো বিক্রি করতে মন চাইল না তার। ওই কবুতর থেকে বাচ্চা হয়, পরে বাচ্চা গুলো বড় হতে হতে তারাও নতুন করে বাচ্চা দেয়। এভাবে ধীরে ধীরে কবুতরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরিকল্পনা এলো একটি খামার করবে। যে ভাবা সেই কাজ। পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে তিনি কবুতরের খামারের সম্প্রসারণ করেন। তার ব্যবসারও প্রসার ঘটতে থাকে। এখন তার খামারে রয়েছে দেশীয় জাতের পাশাপাশি বিদেশী জাতের হোমার, রেড সিরাজী, গিরিবাজ, ময়ুরপঙ্খী, চায়নাসহ ৬-৭ জাতের কবুতর। বর্তমানে ৬০ জোড়া কবুতর রয়েছে তার খামারে। কোনো কর্মচারী নেই। খামারে নিজে এবং তার স্ত্রী কাজ করছেন। যার বর্তমান বাজার দাম হিসাব করলে লক্ষাধিক টাকার কবুতর আছে তার খামারে।

তিনি জানান, খাদ্য ও ওষুধপত্রের খরচ বাদে প্রতি মাসে তার লাভ হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। পাশাপাশি একজন রাজমিস্ত্রি। যা দিয়ে তার সংসার চলে স্বাচ্ছন্দ্যে। তিনি খামারে আরও নানা জাতের দামী দামী কবুতর তুলতে চায়। কোলাহল দক্ষিণা বাতাসের পর্যাপ্ততায় কবুতরগুলো বেড়ে উঠে তার খামারে। প্রতিদিন কোনো না কোনো সাধারণ ক্রেতা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কবুতর ব্যবসায়ীর সমাগম থাকে তার খামারে। বিদেশি জাতের ৪-৫ হাজার টাকা দামের কবুতরের সংখ্যাও কম নাই তার খামারে।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শখের বশে কেনা ৮শ টাকার জোড়া কবুতরই ছিল প্রাথমিক মূলধন। বর্তমান খামারে গড়ে উঠা শতাধিক কবুতর ওই মূলধন থেকেই। তিনি নতুন কোনো মূলধন বিনিয়োগ করেননি এ পর্যন্ত। দিনের বেলায় খাদ্য সরবরাহ করে থাকে তার স্ত্রী। সারাদিন রাজমিস্ত্রির কাজ শেষে সময় দেন খামারে। কোনো কবুতর অসুস্থ হয়েছে কিনা চিহ্নিত করে তার চিকিৎসা তিনি নিজেই দিয়ে থাকেন বলে জানান। কবুতরের রোগবালাই শীতকালে একটু দেখা দিলেও অন্যান্য ঋতুতে তা পরিলক্ষিত হয় খুব কমই। তার মতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠা কবুতরের রোগবালাই তেমন হয় না।

বাঁশখালী উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা মো. ফরিদুল আজিম জানান, মো. কবির মিস্ত্রী একজন পাখি প্রেমিক মানুষ। তিনি ক্ষুদ্র আকারে কবুতরের খামার করে সফল হয়েছেন। বড় খামার করার যে স্বপ্ন দেখেছেন তাতে তিনি সফল হতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button